শীর্ষ চাল আমদানিকারক হতে

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে চাল রফতানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টন বাসমতি চাল আমদানি করা দেশটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপে হয়েছিলেন নাজেহাল। সদ্য মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিদায়ে চাল ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি আশার সম্ভাবনা দেখছেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজেট ঘাটতির কারণে কয়েক বছর ধরে ইরান তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা সংকট। জ্বালানি তেল থেকে আয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের ফলে গত মার্চে ইরান সরকার স্থানীয় আমদানিকারকদের এনআইএমএ বিনিময়ের মাধ্যমে ডলার কিনতে নিষিদ্ধ করেছিল। সব মিলিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসবের জন্য অনেকটাই দায়ী।

২০১৫ সালে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশনের অধীনে ইরানের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর পাকিস্তানের হাফিজাবাদ জেলায় একটি অত্যাধুনিক চালকলের মালিক মুহাম্মদ শফিকের ব্যবসা পুনরায় শুরু হয়েছিল।

অথচ এর আগে দুই বছরে ইরানে তিনি ৫০-৬০ হাজার টন বাসমতি চাল রফতানি করেছিলেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে এসে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। ফলে ইরানের ব্যাংকিং চ্যানেল ডলার সংকটে পড়ে এবং ইরানি আমদানিকারকদের জন্য চালের মূল্য পরিশোধ করতে ডলার সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে ওঠে। ভারতের রফতানিকারকরা বকেয়া পাওনা পরিশোধের আগে বাসমতি চাল বিক্রি করতে অস্বীকার করার পর ইরানি আমদানিকারকরা এখন পাকিস্তান থেকে পণ্যটি কিনতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমাদের পণ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। কিন্তু যখন অর্থ প্রদানের কথা আসে, তখন তারা অসহায় হয়ে পড়ে।

ইরানের মতো পুরনো ও সমৃদ্ধ একটি বাজার থেকে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও পাকিস্তানের রফতারিকারকদের দাবি, ইরানে বাসমতি চাল রফতানি করে লাখ লাখ ডলারের পেমেন্ট আটকা পড়ে আছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইরানে বাসমতি চালের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে অর্ধেক স্থানীয়ভাবে চাষ হয়। বাকি অংশ ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। গত বছর ভারত দেশটিতে ১৪ লাখ টন বাসমতি চাল রফতানি করেছিল। ১৪০ কোটি ডলার আয় হওয়া ভারতের চালের জন্য এটি বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে।

একই সময়ে পাকিস্তান দেশটিতে ৭৭ হাজার কেজি চাল রফতানি করেছিল। এতে পাকিস্তানের ৬৭ হাজার ডলারেরও বেশি আয় হয়। তবে ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের চাল বাণিজ্য এ পরিসংখ্যানের তুলনায় ঢের বেশি বলে জানান রাইস এক্সপোর্টিং অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের (আরইএপি) একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য। তিনি বলেন, সীমান্ত চৌকির মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল ইরানে যায়। আরেকটি রুট হলো করাচি বন্দর থেকে বন্দর আব্বাস। এটার আবার পেমেন্ট আসে দুবাই হয়ে।

তিনি আরো বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ কারণে কোনো ব্যাংক দেশটির সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য এগিয়ে নিতে এলসি ফর্ম দেয় না। যদিও রফতানির জন্য এটা বাধ্যতামূলক। ইরানের খাদ্য ও ওষুধ পণ্যগুলো নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকলেও মার্কিন প্রশাসনের প্রতিশোধের ভয়ে সব ব্যাংক ইরান সম্পর্কিত বাণিজ্য লেনদেন এড়িয়ে চলে।

এ পরিস্থিতিতে বিকল্প কৌশল হিসেবে পাকিস্তানি রফতানিকারকরা দুবাইকে গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে ব্যাংকে ই-ফর্মের আবেদন করে, যা পরে বন্দর আব্বাসে গন্তব্য পরিবর্তন করা হয়। এরপর ইরানের আমদানিকারকদের কাছে একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। এভাবেই ইরানে চাল পাঠানো হতো। বেশির ভাগ গন্তব্য দুবাই দেখানো হলেও ৭০-৮০ শতাংশ কার্গো ইরানের উপকূলে যায়।

এদিকে ভারত আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চ্যানেল উপেক্ষা করে দেশীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বিনিময়ে ইরানে বাসমতি চাল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য রফতানি করত। কিন্তু ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে ট্রাম্প ইরানের জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এটিও বন্ধ হয়ে যায়।

ইরান রফতানিকারকদের তাদের বিদেশী মুদ্রার আয় বাজারের চেয়ে কম দামে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য এনআইএমএ প্রতিষ্ঠা করেছিল। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনুমান করে খাদ্য ও ওষুধ আমদানির জন্য ডলারের সরবরাহ রক্ষায় ২০১৮ সালে এ এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু খোলাবাজার থেকে ব্যয়বহুল ডলার সংগ্রহ করতে হওয়ায় বাসমতি চালের আমদানিকারকরা এ পদক্ষেপে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ডলার সংকটের কারণে যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না ইরানের চাল আমদানিকারকরা। আর পাওনা না পেয়ে দেশটিতে বাসমতি চাল সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন দক্ষিণ এশীয় রফতানিকারকরা। ট্রাম্পের বিদায়ে চাল ব্যবসায়ীদের লাভ হবে বিষয়ক সংবাদ টিআরটি ওয়ার্ল্ড প্রকাশ করেছে।

ট্রাম্পের বিদায়ে চাল ব্যবসায়ীদের যেসব লাভ হবে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ