মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: সারাদেশে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন, বিপণন-বিক্রিতে প্রথম স্থানে রাজশাহী। এখানে উৎপাদন কমেনি মোটেও; তবে বেড়েছে উৎপাদন খরচ ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ফলে জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগে প্রতিকেজি মাছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। এ দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আজ রোববার (১৬ জুলাই ২০২২) রাজশাহীর সাহেববাজার মাছের আড়ত, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর মাছের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। ঈদের পর থেকেই মাছের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য তাদের।

তারা বলছেন, ঈদের পর বাজারে মাছের চাহিদা থাকলেও আমদানি না থাকায় এক দফায় দাম বেড়েছে। এখন সবকিছুর দাম বেড়েছে ফলে মাছের দাম বাড়ানো যৌক্তিক। বৃষ্টি হওয়ার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না বলেও অযৌক্তিক অজুহাত দাঁড় করান ব্যবসায়ীরা।

কারণ হিসেবে মাছ ধরার জেলে, বহন করার গাড়ি ও সর্বপরি লোকবল সংকটের কারণে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে মাছের দাম। তবে, এ দাম আরো বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

পড়তে পারেন: মাছ চাষে দেশসেরা দিনাজপুরের তারেক

সাহেববাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছের দাম কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমরা মাছ কিনতে বেশি দামে কিনছি, কমদামে বিক্রি করতে পারব না। তেলের দাম বাড়ার কারণে মাছের পরিবহন খরচ বেড়েছে। যারা মাছ ধরার জেলে আছে, তারাও গোঁ ধরেছে মজুরি বাড়াতে হবে। সবমিলিয়ে অটোমেটিক তেলের প্রভাব পড়েছে বাজারে।

রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ছোট এক থেকে দেড় কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৫ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়।

এছাড়া, সিলভার কার্প মাছ প্রতিকেজি ২৪০, ছোট আকারের কাতল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা; ৫ কেজির কাতল ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা , দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ২০০ টাকা এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, বোয়াল ১০০০ থেকে বেড়ে ১০৫০ টাকা। প্রতিটি মাছের কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে চিংড়ির কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বাগদা চিংড়ি ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: মাছের কেজিতে বেড়েছে ৮০ টাকা, খুশি চাষিরা

মাছ ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ইলিশের মৌসুম চলছে। বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ রয়েছে কিন্তু দাম বেড়েছে। মানুষ দাম বাড়লে আর তেমন রিঅ্যাকশন দেখায় না। দাম ৫০ টাকা বেড়েছে । আগে হাফকেজি- ছয়’শ গ্রামের ইলিশ ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে এখন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৩’শ টাকা থেকে ১৪”শ টাকা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার ১৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাছ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিন টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৩১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭২০ টিতে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ সালের দিকে নারিশ মাছের ফিড কিনেছি ৯০০ টাকা সেই বস্তা এখন ১৪০০ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ার সাথে সাথে মাছের দাম বেড়েছে। কিছুদিন ধরে যে দাম তাতে কিছুটা লাভ করা সম্ভব। এখন পাইকারিতে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে আমরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি পাচ্ছি। আগে ৫ কেজির রুই ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি দাম বাড়ার পর ৫’শ টাকা কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে বাড়ছে সমন্বিত মাছ চাষ, হাসি ফুটছে চাষিদের

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব চাষি পর্যায়ে কিভাবে পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগামী সপ্তাহে ঢাকায় মাছ পাঠাব। ট্রাকভাড়া বেড়ে গেছে, জেলের মজুরি বাড়াতে হবে তাছাড়া মাছ ধরবে না। খাবার খরচ বাড়ছে। এটা মূলত একধরণের চেইন। চাইলেই কিছু করা সম্ভব হয়না।

বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ। গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হলেও একদিন পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রামে রাজশাহীর মাছ যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাইরে মাছ যাওয়ার কারণে মাছের দাম বেশি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা ও বেশ ভালো দাম থাকায় খুশি এখানকার চাষিরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ