মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে গত এক দশকে মাছ চাষে বিল্পব ঘটেছে। জেলায় বছরে প্রায় ১৭শ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয়। এসব মাছ উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে কমছে বেকার সংখ্যা। কর্মসংস্থান ও আর্থিক লাভের আশায় বাড়ছে সমন্বিত মাছ চাষ, হাসি ফুটছে চাষিদের মুখে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। প্রায় দুই যুগ ধরে মাছ চাষ করছেন। ছোট বড় মিলিয়ে তাঁর পুকুর সংখ্যা ২১ টি। যার আয়তন ২৫০ বিঘা ছাড়িয়ে। প্রতিবছর এসব পুকুর থেকে আয় হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। এসব পুকুরে উৎপাদিত মাছ বিক্রি করেই তিনি এখন কোটিপতি। চাষ করেন রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ। পুকুরের এসব তাজা মাছ কৌশলে ট্রাকে করে কয়েকবার পানি বদলিয়ে পাঠাচ্ছেন ঢাকার বাজারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এসব পুকুরের পাশে গড়ে তোলা হচ্ছে কলা, পেয়ারা, বিভিন্ন সবজির বাগান। পুকুরের সাথে লাগোয়া গড়ে উঠেছে হাঁস-মুরগির খামার। মাছ চাষের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ ঘটে এখান থেকে। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে নেমেছেন মাছ চাষে। গ্রামে গড়ে উঠছে নতুন নতুন পাকা বাড়ি সেইসাথে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে দু-দিনে মাছের ক্ষতি ১৪ কোটি টাকার বেশি

জেনে নিন তেলাপিয়া মাছের রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

সূত্র জানায়, রাজশাহীতে বার্ষিক মাছের চাহিদা ৫২ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন। মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ। অথচ তিন বছর আগে ২০১৭ সালের বার্ষিক মাছের চাহিদা ছিল ৫৩ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন। সেসময় উৎপাদন হয় প্রায় ৬৬ হাজার ৮২২ মেট্রিন টন এবং উদ্বৃত্ত থাকে ১২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন। বর্তমানে চাহিদা কমলেও উৎপাদন ৮২ হাজার ৫৪৫ মেট্রিন টন, ফলে উদ্বৃত্ত থাকে ২৮ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৫১৫টিতে।

রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। এই মাছের অধিকাংশই পবা উপজেলার।

পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের মাছচাষি শফিকুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ‘আগের থেকে মাছ চাষ বেড়েছে। পুকুরের পাশে লাগানো আছে কলা, পেঁপের গাছ। পেঁপে আর কলা বিক্রি করেও অনেক টাকা আসে, লাভ হয় মোটামুটি। তবে, এবছর অনেকটাই ধকল সহ্য করতে হলো। পুকুরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারনে মাছ মারা যাওয়ায় লোকসান হয়েছে। রুই, কাতলা’র সাথে অন্যান্য মাছ চাষ করি। আয়ের উৎস মূলত পুকুর।’

একই এলাকার মাছ চাষি আইনাল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, সমন্বিত ভাবেই মাছ চাষ করা হয়। পুকুরের পাড়ে কলার গাছ আছে। আর কিছু পেঁপে লাগানো আছে। বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়া যায়। আগে এভাবে মাছ চাষ হতো না। কয়েক বছর থেকে মাছ চাষ বেড়েছে ’

আরোও পড়ুন: মাছের রক্ত জমাট বাঁধা রোগের কারণ ও লক্ষণ

মাছের পেট ফোলা রোগের কারণ ও চিকিৎসা

আরেক মাছ চাষি গফুর মোল্লা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সমন্বিত মাছ চাষ লাভজনক। আমি নিজে পুকুরের পাড়ে সবজি চাষ করিনা। যারা আমার পুকুরে পাহারা দেয় তাঁরা সবজি চাষ করে। বিক্রি করে আমাকেও দেয় তাঁরাও নেয়। কলা আর পেঁপে বেশি আছে। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে অন্য সবজিও আছে। পুকুরে রুই, মিড়কা, জাপানি, সিলভার সব ধরনের মাছ আছে।’

রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, জেলায় সমন্বিত মাছ চাষ বেড়েছে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৮৩ হাজার মেট্রিকটন। জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ৬৩ মেট্রিকটন এবং উদ্বৃত্ত থাকে ২৮ হাজার ৭৮ মেট্রিকটন।

তিনি আরোও বলেন, চাষিদের মাছ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ সবসময়ই দেওয়া হয়।

রাজশাহীতে বাড়ছে সমন্বিত মাছ চাষ, হাসি ফুটছে চাষিদের মুখে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতেই রাজশাহীতে দু-দিনে মারা যায় প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মরে ভেসে উঠে রুই, কাতল, সিলভারকার্প, জাপানিসহ কার্পজাতীয় মাছ। এমন বৃহৎ ক্ষতির পরও বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ