নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  মুন্সিগঞ্জের আড়িয়ল বিলে চাষ হচ্ছে ২ মণ ওজনের মিষ্টি কুমড়া। স্বাভাবিকভাবে মিষ্টি কুমড়া কয়েক কেজি হয়ে থাকলেও এই জাতের মিষ্টিকুমড়া প্রায় ২ মণ পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। আকারে বড় ও স্বাদের কারণে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে এটি দেশের যেকোন জায়গায় চাষ করা যাবে।

কৃষকরা জানান, একেকটি কুমড়ার ওজন হয়েছে ২০ কেজি থেকে ৭০-৮০ কেজি। অর্থাৎ দুই মণ ওজনেরও কুমড়ার ফলন হয়েছে। তবে এ বিলে ১২০ কেজি (৩মণ) ওজনের কুমড়াও হয়ে থাকে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। এবছর আকৃতিতে কিছু ছোট হলেও বেশি ফলন হয়েছে বলে জানান তারা। বর্তমানে প্রতিদিন ২৫-৩০ টন কুমড়া বাজারজাত করছেন কৃষকরা।

পড়তে পারেন: মিষ্টিকুমড়ার কচি পাতা খেকো পোকা দমন

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর বিলের গাদিঘাট, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালাসহ ১৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে স্থানীয় জাতের এসব মিষ্টি কুমড়া। স্থানীয় বাজার ছাড়াও আশপাশের জেলা ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এ কুমড়ার রয়েছে বেশ কদর। ফসল উৎপাদন শেষে এখন চলছে কুমড়া উত্তোলন মৌসুম।

বিলের গাদিঘাট এলাকায় গিয়ে জানা যায়, জমি থেকে বৃহৎ আকৃতির কুমড়া বাজারজাতকরণে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের। ট্রলার-নৌকায় স্থানীয় গাদিঘাট বাজারে ও পরে ট্রাকে করে কুমড়া সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে।

পড়তে পারেন: মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন রোগ ও দমন ব্যবস্থাপনা

কয়েকজন কৃষক জানান, একগাড়ি (পিকআপ) কুমড়া ঢাকার বাজারে নিতে ২৪০০ টাকা ভাড়া খরচ হয়। কৃষকদের কাছ থেকে কেজি প্রতি যে দরে কিনি এ থেকে ৫-৭ টাকা লাভে ঢাকায় বিক্রি করি। গতবছর কেজি প্রতি ৭-১০ টাকা থাকলেও এবার পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকা দরে। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

গাদিঘাট এলাকার কৃষক মো. বাবু জানান, বর্ষার পানি শুকিয়ে এলে বীজ রোপণ করা হয় কুমড়ার, তিন মাসের মাথায় ফসল উত্তোলন উপযোগী হয়। এবার বেশি ফলন হয়েছে। তবে অন্যবার যেমন ১০০ কেজি ১২০-১৩০ কেজি কুমড়া হয়, এবছর সর্বোচ্চ ৮০ কেজি কুমড়া দেখেছি। ট্রলার নৌকায় করে আমরা গাদিঘাটে কুমড়া আনি, পরে বিকেলে ৫-৬টি পিকআপ-ট্রাকে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।

পড়তে পারেন:  অধিক ফলন পেতে মিষ্টি কুমড়ার যেসব জাত নির্বাচন করবেন

আরেক কৃষক মো. নুরুল হক জানান দুই কানি জমিতে আবাদ করেছি। আমাদের খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। গন্ডাপ্রতি (৭শতাংশ) জমিতে কুমড়া আবাদ করতে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানান, আড়িয়ল বিলের কুমড়ার এক বিশেষত্ব রয়েছে। স্থানীয় বীজ অন্য কোথাও রোপণ করা হলেও এতো বড় আকৃতির হয় না। এর কারণ ৬ থেকে ৮ মাস আড়িয়ল বিল পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এসময় পানিতে জন্ম নেওয়া জলজ উদ্ভিদ পরবর্তীতে পচে উৎকৃষ্টমানের জৈবসার হিসেবে বিলের মাটিকে উর্বর করে।

সামান্য পরিচর্যা করলেই উর্বর মাটিতে বিশাল কুমড়ার উৎপাদনের এটিই রহস্য। গতবছর বিলম্বে ফসল উত্তোলন আর বাজারে শাক-সবজির প্রাচুর্য থাকায় দাম না পেয়ে কৃষকদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। তবে এবার আগেভাগেই উত্তোলন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। আগে উত্তোলনে আকৃতিতে তুলনামূলক কিছুটা ছোট হলেও ভালো ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।

পড়তে পারেন: মিষ্টি কুমড়ার মাছি পোকা দমনে করণীয়

কথা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: খুরশীদ আলমের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই কৃষকরা চাষ করেন এই মিষ্টি কুমড়া। এটি কোন নির্দিষ্ট জাত নয়। এর নাম নাই। কৃষকরা স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবন করেছেন এবং তারাই বীজ সংগ্রহ করে; প্রতিবছর চাষ করে।

তিনি আরোও বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষ করা যাবে কিন্তু এখানকার মতো এতবড় সাইজের নাও হতে পারে। যেমন রাজশাহীর আমের চারা অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে আম ধরলেও সেই টেস্ট কিন্তু পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী দাস এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, এবছর মিষ্টিকুমড়ার আকার একটু ছোট হয়েছে। দাম ভালো থাকার কারণে তাড়াতাড়ি বিকি করছেন কৃষকরা। তেমন পরিচর্যা করতে হয় না। গতবছর আড়িয়ল বিলে ১৯০ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয়েছিলো।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ