আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত জুন-জুলাইয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধান উৎপাদন কমার শঙ্কা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। দ্য কোরিয়া হেরাল্ড রাষ্ট্রায়ত্ত পরিসংখ্যান সংস্থা স্ট্যাটিসটিকস কোরিয়ার বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় এ বছর ৭৮ হাজার টন ধান উৎপাদন কম হবে। এতে দেশটির ধান উৎপাদন গত বছরের ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টন থেকে ২ শতাংশ কমে চলতি বছর ৩৮ লাখ টনে দাঁড়াচ্ছে।

পড়তে পারেন: এবার ১ লাখ টন ধান উৎপাদন বাড়বে, তবুও চাপে থাকবে বাংলাদেশ

স্টাটিসটিকস কোরিয়া গতকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি মৌসুমে দক্ষিণ কোরিয়ায় ধানের আবাদ গত বছরের ৭ হাজার ৩২০ বর্গকিলোমিটার থেকে দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৭ হাজার ২৭০ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

ধানের দামের পতন মোকাবেলাসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের জন্য সরকারের সহায়তার মধ্যেই এ বছর দেশটির ধানের উৎপাদন কমবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় দক্ষিণ জিওল্লা প্রদেশে। এ বছর প্রদেশটিতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ধান উৎপাদন কম হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এদিকে শ্রীলংকায় চলতি মৌসুমে সার ও জ্বালানির অভাবে দিশেহারা কৃৃষকরা। তারা বলছেন, ধানের উৎপাদন হ্রাস পেয়ে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৩ টন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছরে এ উৎপাদন ছিল হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৫ টন। সে হিসেবে আগের মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন এ বছরে প্রায় অর্ধেকে নামতে পারে।

শ্রীলংকার অধিবাসীদের প্রধান খাবার হলো ভাত। চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতিতে দেশটিতে খাদ্যের সংকট আরো বাড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন। সারের অভাবকে এ সংকটের প্রধান কারণ বলছেন না তারা। বরং পর্যাপ্ত জ্বালানি আমদানিতে দেশটির রিজার্ভের অপ্রতুলতাকে তারা এর জন্য দায়ী করছেন।

জ্বালানির অভাবে খাদ্যসামগ্রী পরিবহনে ব্যবহূত যানবাহন গ্রামে গ্রামে পৌঁছাতে পারছে না। ফলে কৃষকরা আশঙ্কা করছেন যেটুকু ধান এবার হয়েছে সেটুকুও মাঠে থেকে যাবে। আর তাই মাঠের এ সম্পদকে বাঁচাতে হলেও দ্বীপদেশটিকে ধার করে হলেও জ্বালানি আমদানি করতে হবে। না হলে এর থেকেও বেশি মূল্যে হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে।

পড়তে পারেন: বেশি দামে চাল আমদানি করছে শ্রীলংকা

শ্রীলংকায় ধান উৎপাদনের দুটো মৌসুম রয়েছে। প্রথমটি মাহা, দ্বিতীয়টি ইয়ালা। মাহা মৌসুমে ধান উৎপাদন অধিক হয় এবং এটি সেপ্টেম্বরে শুরু হয়। ইয়ালা মে মাসে শুরু হয়ে আগস্টে শেষ হয়। এ বছর ইয়ালা মৌসুমের উৎপাদন কম হওয়ায় অধিক খাদ্যশস্য আমদানির প্রয়োজন হবে। দেশটি জানিয়েছে, এরই মধ্যে ২০২২ সালে তাদের ৪ লাখ ২৪ হাজার টন খাদ্যদ্রব্য কম আমদানি করা হয়েছে।

সরকারি তথ্যমতে, ২ কোটি ২০ লাখ অধিবাসীর দেশটিতে ধানচাষী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। আরো ৮২ লাখ লোক মৎস্য আহরণ ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছরে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, ৬ কোটি ৭০ লাখ শ্রীলংকার অধিবাসী এক বছর ধরে ভালোভাবে খেতে পারছে না।

পড়তে পারেন: দেশে সারের কোন সংকট নেই: কৃষিমন্ত্রী

এমন করুণ পরিস্থিতির ভেতরে গবেষকরা দেশটির কপালে আরো দুর্গতির আশঙ্কা করছেন। কারণ ইয়ালা মৌসুমে উৎপাদন কম হলে মাহা মৌসুমে তা পুষিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু জ্বালানির এই সংকট চলতে থাকলে সামনের মাহা মৌসুমে তা আর পুষিয়ে নেয়া যাবে না। এর কারণে চলমান ইয়ালা মৌসুমের ধান যেমন তারা কাটতে পারবে না, তেমনি পারবে না সামনের মাহা মৌসুমের শস্য বপন করতে। সম্প্রতি কৃষকরা তাদের এ আশঙ্কার কথা স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন।

মুদ্রাস্ফীতির আগে প্রতি হেক্টর জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হতো প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার শ্রীলংকান রুপি, যা প্রায় ৬৯৩ আমেরিকান ডলার। তখন প্রতি হেক্টর থেকে তারা উৎপাদন করত ১০০ বস্তা ধান। কিন্তু সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতিতে এ খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার রুপি এবং হেক্টরপ্রতি উৎপাদন অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ বস্তা। এভাবে সার ও জ্বালানি ঘাটতি চলতে থাকলে দেশটির জনগণ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ