কৃষিবিদ সমীরণ বিশ্বাস, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ধানের গুণগত মান নষ্ট হয় চিটা থাকলে। এছাড়া চিটার কারণে ফলন বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। আসলে ধানে চিটা হওয়ার কারণ ও সমাধান জানা প্রত্যেক চাষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাভাবিক ভাবে ধানে শতকরা ১৫-২০% চিটা হয়ে থাকে। চিটার পরিমান এর চেয়ে বেশী হলে ভাবতে হবে থোর থেকে ফুল ফোটা এবং ধান পাকার আগ পর্যন্ত ফসল কোন না কোন বিপদের শিকার হয়েছে, যেমন- অতি ঠান্ডা, বা গরম, খরা বা অতি বৃষ্টি, ঝড় ঝঞ্ঝা, পোকা ও রোগ বালাই।

ঠান্ডা:
তে তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং দিনের তাপমাত্রা ২৮-২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস কাইচ থোর থেকে থোর অবস্থা পর্যন্ত , ধান চিটা হওয়ার জন্য সংকট তাপমাত্রা। ৫-৬ দিন শৈত্য প্রবাহ চলতে থাকলে অতিরিক্ত চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাতের তাপমাত্রা কমে গেলেও, যদি দিনের তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী থাকে তা হলেও চিটা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

পড়তে পারেন: ধানের ব্লাস্ট রোগ ও প্রতিকার

গরম:
ধানের অসহনশীল তাপমাত্রা হলো ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার বেশী। ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘন্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে অতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।

খরা:
খরার কারনে শাখা বৃদ্ধি কম হয়, বিকৃত ও বন্ধ্যা ধানের জম্ম দেয়ায় ধান চিটা হয়ে যায়।

ঝড়ো বাতাস:
অতি ঝড়ো বাতাসে গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়া বাধা পায়, এতে ফসলের অঙ্গ গঠনে বাধা পায়। ঝড়ো বাতাসে পরাগায়ন,গর্ভ ধারন,ও চালের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে ধানে খয়রি ও কালো দাগ পড়ে এবং ধান চিটা হয়ে যেতে পারে।

পড়তে পারেন: ধানের শিকড়ে গিঁট রোগ দমনে করণীয়

শৈত্য প্রবাহ:
১. ধানের চারা মারা যায়।
২. কুশির সংখ্যা কমে যায়
৩. ধান গাছ হলুদ হয়ে যায়
৪.  থোর থেকে শিষ বের হতে পারে না
৫.  শিষের আগার ধান চিটা হয়ে যায়
৬. গরম ও ঝড়ো বাতাসে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে

করনীয়:
১. জমিতে সর্বদা পানি রাখতে হবে
২. বিঘাপ্রতি ৫কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে
৩. এমওপি সার ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম মিশিয়ে ৫ শতকে স্প্রে করুন।
৪. উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করুন।

ধানের ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট রোগ দমনে করণীয়

গত বছরের বোরো মৌসুম থেকে মাঠ পর্যায়ে ধানের ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। গান্ধির আক্রমণ অথবা হট ও কোল্ড ইনজুরী বলে অনেকেই মনে করছেন।

কোন কিছু বোঝার আগেই ধানের মারাত্নক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই এ রোগ দ্রুত ছড়ানোর আগেই আমাদের দমন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে হবে।

আরও পড়ুন: ধানের ভুয়াঝুল রোগ দমনে করণীয়

ধানের ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট রোগ: 
ক্ষতির ধরণ: ধানের শীষ দুধ আসার আগেই আংশিক বা অধিকাংশ চিটা হয়, কিন্তু মাজরায় আক্রান্তের মতো সাদা শীষ হয় না, এমনকি টান দিলে মাজরায় কাটা সাদা শীষের মত সহজে উঠেও আসে না। গান্ধি পোকায় ধানের দুধ অবস্থায় আক্রমণ করলে ধানে যেমন কালচে দাগ পড়ে, ক্ষতির লক্ষণ কিছুটা তেমনই তবে এতে ছিদ্র থাকে না। ঝড়ো বা ঠান্ডা ও গরম আবহাওয়ায় এই রোগ ছড়ায়।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা: 
১. জমিতে পর্যাপ্ত পটাশ সার এর প্রয়োগ করতে হবে যা এ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
২. ব্যাকটেরিসাইড- কাসুগামাইসিন + বিসমারথিওজল (কিমিয়া, ব্যাকটোবান, ব্যাকট্রল, টিমসেন, সানপোমা, ব্যাকটাফ ইত্যাদি) অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।

৩. ইউরিয়া সারের প্রয়োগ কমিয়ে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
৪. ৬০ গ্রাম এমওপি + ২.৫ গ্রাম চিলেটেড দস্তা + ৬০ গ্রাম থিওভিট/কুমুলাস ডি এফ বা ৮০% সালফার আছে এমন কোনো সালফার পণ্য ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে কাইচ থোড় অবস্থায় শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ