ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি মৌসুমে যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড পরিমাণ তুলার আবাদ হয়েছে। ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলার ভালো দাম পাওয়ায় এই ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। খবর বণিক বার্তা।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আবাদে নতুন সংযোজন উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের বীজ। এ বীজে ফলন যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনি একই জমিতে অন্য সবজি আবাদ করে কৃষক দ্বিগুণ লাভ করছেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড যশোর উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই চার জেলায় চলতি মৌসুমে তুলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩৫ হেক্টরে। এর মধ্যে যশোরেই আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩৫২ হেক্টরে।

কৃষকরা জানান, এ বছর তুলা আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো। বিঘাপ্রতি প্রায় ১৫ মণ তুলা উৎপাদন হচ্ছে। গত মৌসুমে প্রতি মণ তুলার দাম ৩ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এ বছর তা বেড়ে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

সোহরাব হোসেন নামে যশোরের এক তুলাচাষী বলেন, এ মৌসুমে যারা পাট আবাদ করেছেন তারা চরম লোকসান গুনেছেন। এক মণ পাটের দাম বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ এক মণ তুলার দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে তুলা আবাদ করতে কৃষকের ব্যয় হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে তুলা উৎপাদন করে কৃষকের নিট আয় থাকে ৪০-৪৫ হাজার টাকা, যা অন্য কোনো ফসলে সম্ভব নয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

অর্ধশত বছরে তুলা উন্নয়ন বোর্ড: অর্জন ও সফলতা

বন্দরে আটকে আছে ১০ লাখ টন তুলা

ব্যাপক পরিসরে তুলার আবাদ বাড়িয়েছে তুরস্ক

তুলা উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগদান ড. আলহাজ উদ্দিনের

রিয়াজ উদ্দীন নামে আরেক চাষী বলেন, বাজারে অন্য ফসলের দাম ওঠানামা করলেও তুলার দাম শুরু থেকেই নির্ধারিত। ফলে লোকসানের কোনো সুযোগ নেই। তুলা খেত থেকে ওঠানোর পরই প্রক্রিয়াকরণ কারখানার লোকেরা এসে নিয়ে যায়। এতে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই।

জাহাঙ্গীর আলম নামে ঝিনাইদহের এক চাষী বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। একই জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি আবাদ করে বাড়তি লাভ করেছি। অথচ এর আগে আমরা পাটসহ অন্য ফসল আবাদ করে তেমন একটা লাভ করতে পারিনি।’

যশোরের হৈবৎ জিনিং ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান মন্টু বলেন, তুলা আমদানি কমাতে সরকারের পাশাপাশি জিনিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও কৃষকের বীজ ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। জিনিং অ্যাসোসিয়েশনের এক একটি জোনের আওতায় কৃষকের কাছ থেকে নির্ধারিত ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে তুলা সংগ্রহ করা হয়। এসব তুলা নিয়ে কৃষককে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। দিন দিন তুলাচাষীর সংখ্যা বাড়ছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড যশোর অঞ্চলের উপপরিচালক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘এ অঞ্চলে তুলা আবাদ সম্প্রসারণে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। উচ্চফলনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও তা থেকে বীজ তৈরি করে কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। যশোরের চৌগাছার তুলা গবেষণা খামারের বৈজ্ঞানিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই টন উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের তুলা বীজ উৎপাদন করে কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করি।’ আগামী অর্থবছরে তিন টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার বেল। এটি ৮-১০ লাখ বেলে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। বিশেষ করে যশোরসহ দক্ষিণের জেলা ছাড়াও পাহাড়ি এলাকায় তুলা চাষের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ