ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ জেলায় উৎপাদিত কাঁচা মরিচ যাচ্ছে চট্টগ্রামে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জেলার ইশ্বরলক্ষীপুর বাজারে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মন কাঁচা মরিচ কেনা বেচা হচ্ছে। বর্তমানে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।

কিছুকাল আগেও কৃষকের একমাত্র ভরসা ছিল ধান চাষ। সেই জমিতে এখন সারা বছর চাষ হচ্ছে মরিচ। এখানকার প্রতিটি কৃষকের জমিতেই রয়েছে মরিচের মাচা। দফায় দফায় এ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম বাড়ায় একদিকে যেমন ভোক্তারা অসুবিধায় পড়েছেন ঠিক তেমনি বহু চাষি স্বাবলম্বীও হয়েছেন।

ঈশ্বর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক মন্টু শেখ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মরিচ ভালো হয়েছিল। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ মন মরিচ উঠতো। অতিরিক্ত বর্ষার কারণে মরিচের গাছ মরে গেছে। এখন গড়ে ৫কাঠা জমিতে মরিচের চারা গাছ জিবিত আছে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি মরিচ বিক্রি করতে পারছি।

বাশবাড়ীয়া গ্রামের মরিচ চাষি জয়নাল আবেদীন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এলাকার মরিচ মহিলারা বেশী তুলে। মহিলারা সংসারের কাজ সেরে মরিচ তুলার কাজে যায়। একজন মহিলা এক মৌসুমে মরিচ তুলে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করে। কিন্তু এখন সেটা আর হচ্ছে না। কারন ক্ষেতের বেশীর ভাগ মরিচ গাছ মরে গেছে।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে সাড়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মরিচ

এবার বাজারে আসছে কাঁচা পেঁয়াজ রসুনের গুড়া

মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারি খোদা বক্স এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন আনাচে কানাচে আমরা এই বাজার থেকে প্রতিদিন মরিচ ক্রয় করে পাঠিয়ে দিই। যখন যে দামে বিক্রি হয় সেই দামে আমরা মরিচ ক্রয় করি। তবে চাষিদের মরিচ বিক্রি করতে কোন অসুবিধা হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা মরিচ কিনতে এ বাজারে আসে।

ভরাডুবা গ্রামের মরিচ চাষি নাজমুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, তিন বছর আগে ৫বিঘা মজিতে মরিচ চাষ করতে খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকাই সেই বার মরিচের ফলন ভালো হয়েছিল। এবং ভালো দাম পেয়েছিলাম। সেই বছর যাবতীয় খরচ বাদে আয় হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা। তারপর থেকে প্রতি বছর কাঁচা মরিচের আবাদ করছি। কিন্তু এত টাকা আর কোন দিন চোখে দেখিনি।

তিন ভাই মোল্লা ট্রের্ডাসের মালিক আলমগীর হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমরা এই হাটে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনি। সেই মরিচ নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করি। সারা বছর মরিচের বসে। তবে জ্যেষ্ঠ- আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয়ে কার্তিক মাস পর্যন্ত পুরো দমে কেনা বেচা হয়।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনিসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিদিন এই বাজার থেকে ২শ মন মরিচ কিনে চট্রগ্রাম পাঠান। কোনও ঝামেলা নেই। তাই তারা এ বাজারে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কেনেন। মরিচের ভালো দাম পান কৃষকরা। তাই এ বাজারে দিন দিন মরিচ বিক্রি বেড়েই চলছে। কৃষকের কাছে টাটকা ও তুলনামুলক কমদামে কাঁচামরিচ পাওয়া যায়। মুনফা ভালো হওয়ায় তারা ৫ বছর ধরে এখানে মরিচ কিনতে আসেন।

আরোও পড়ুন: মরিচের ফলছিদ্রকারী পোকা দমনের কৌশল

লাভজনক ‘গোল মরিচ’র চাষ ব্যবস্থাপনা ও রোগ দমন পদ্ধতি

মরিচ বিক্রি করতে আসা মিনহাজুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বাবু, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, কাঙিক্ষত মূল্য পাওয়া যায়, ওজনে কাটচুপি না হওয়া এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারা যায় তাই তারা এ বাজারে মরিচ বিক্রি করতে আসেন।

সফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বাচ্ছু এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, এই বাজারকে ঘিরে শুধু মহাদেবপুর উপজেলা নয়। আশেপাশের ৬টি উপজেলা নওগাঁ সদর, বদলগাছী, পাত্নীতলা, সাপাহার, পোরশা ও মান্দা থেকে মরিচ বিক্রি করা জন্য এই বাজারে আসেন। প্রায় ৬শ লোক প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এই বাজারকে ঘিরে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন এ বাজার থেকে ১০ থেকে ১২ ট্রাক মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মহাদেবপুর উপজেলায় ৬০হেক্টর মজিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। ২শ জন কৃষককে কৃষি অফিস মরিচ চাষ বৃদ্ধির জন্য বিজ ও সার সরবরাহ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, নওগাঁ জেলায় ২শ ১০ হেক্টর মজিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে মরিচ চাষের জন্য ৩০ হাজার জন কৃষককে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করবে সরকার। ইতোমধ্য আগাম মরিচ চাষ শুরু হয়েছে। কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের পাশে আছে এবং থাকবে। জেলার সবচেয়ে বেশী মরিচ চাষ হয় মহাদেবপুর উপজেলায় এবং দ্বিতীয় স্থানে বদলগাছী।

উৎপাদিত মরিচ বাজারজাতকরণ করতে সুবিধা হওয়ায় মরিচ চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। চাষ করছেন বিভিন্ন জাতের মরিচ।  নওগাঁর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে চট্টগ্রাম এতে খুশি কৃষকরা। এই কাঁচা মরিচের বাজার ধরে রাখতে চান এখানকার মরিচ চাষিরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ