ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রানীনগরে ভেজাল কীটনাশকে বাজার সয়লাব। ফসলে ভেজাল কীটনাশক ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। এসব ভেজাল কীটনাশক ব্যবহারে উপকারের পরিবর্তে উল্টো ক্ষতি হচ্ছে অভিযোগ তাদের।

ধানে পোকা দমনে দোকান থেকে কেনা কীটনাশকে কোন কাজ করছে না । একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, ইনতেফা কোম্পানীর ‘বাতির’ নামক কীটনাশক কোম্পানির নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করে থাকে। উপজেলায় গত দুইমাস থেকে ‘বাতির’ নামক কীটনাশক বাজারে নাই। কোম্পানির নির্ধারিত দোকানগুলোতে এ কীটনাশক না থাকলেও বাহিরের কিছু দোকানগুলোতে সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষকরা ধানের পোকা দমনে এ কীটনাশক স্প্রে করেন। কিন্তু কিছুতেই পোকা দমন সম্ভব হচ্ছেনা। উল্টো কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ। কোম্পানির এ ‘বাতির’ কীটনাশক যেতেহু দুইমাস থেকে সরবরহার নাই। সেহেতু বিষয়টি নিয়ে কোম্পানির জেলা প্রতিনিধিরা মাঠে নামেন।

পরে দেখেন বাজারে যে ‘বাতির’ নামক কীটনাশক আছে সেটি তাদের না। হুবহু তাদের মোড়ক নকল করে বাজারে বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। আর কৃষকরা না বুঝে ওই নকল কীটনাশক কিনে প্রতারিত হতে হচ্ছে। নকল কীটনাশক বিক্র বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন কৃষকরা।

কোম্পানির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার আবাদপুকুর বাজারে উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে। এসময় নকল ‘বাতির’ কীটনাশক বিক্রি করার দায়ে কীটনাশক ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়

আরোও পড়ুন: নওগাঁর পুর্নভবা নদীর পানি বৃদ্ধি, দেড় হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট

উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক মুনছুর আলী বলেন, প্রায় আড়াইমাস আগে বাতির কীটনাশক ১০০ গ্রাম ওজনের কিনেছিলাম। গত ১৫-২০ দিন আগে আবারও কিনার জন্য আবাদপুকুর বাজারে গিয়ে অনেক খুঁজে একটা দোকানে পেয়েছিলাম। ১০০ গ্রাম ওজনের দাম নিবে ২৮০ টাকা। এছাড়া প্যাকেটের ভিতরে দানাদানা ভাব ছিল। সন্দেহ হওয়ায় সেটি আর নেয়নি। যারা ওই দোকান থেকে বাতির কীটনাশক কিনেছে তারা প্রতারিত হয়েছে।

আবাদপুকুর বাজারের কীটনাশক ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, ‘বাতির’ কীটনাশক আসল না নকল তা জানিনা। তবে কোম্পানির লোক পরিচয় দিয়ে দোকানে দিয়েছিলেন। পরে কোম্পানির আসল লোকজন প্রশাসনের সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে কীটনাশকটি নকল বলে জব্দ করে। তবে যারা ওই কীটনাশক সরবরাহ করে আসছিল তারা আর আসেনা।

ইনতেফা কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার আবু সাঈদ বলেন, গত দুই মাস থেকে কোম্পানির ওই কীটনাশক সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু কীটনাশক ব্যবসায়ীরা ‘বাতির’ কীটনাশক বিক্রি করে আসছিলেন। কৃষকরা ওই কীটনাশক ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছিলেন না বরং অভিযোগ আসছিল।

আরোও পড়ুন: নওগাঁয় পাউবোর উদাসীনতায় নষ্ট দুই হাজার বিঘা জমির ফসল

এরপর আমরা বাজারে গিয়ে কীটনাশক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ‘বাতির’ কীটনাশকটি দেখি। সেটা নকল বলে প্রতিয়মান হয়। আমাদের কোম্পানির মনোগ্রাম সহ সবকিছু নকল করা হয়েছে। কোম্পানির লোক পরিচয় দিয়ে যিনি কীটনাশক সরবরাহ করতেন তাদের একজনের নামও আমরা পেয়েছি। বিষয়টি কোম্পানিকে অবগত করা হয়েছে।

নওগাঁর রানীনগরে ভেজাল কীটনাশকে বাজার সয়লাব বিষয়ে রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ভেজাল কীটনাশকের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা কোথায় থেকে কিভাবে সেগুলো কিনে তা বলতে চান না। ভেজাল কীটনাশক বিক্রি বন্ধ এবং কৃষকদের বাঁচাতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ