মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চতুর্থ বারের বন্যায় নওগাঁর ছয় উপজেলার চাষিদের কপাল পুড়েছে। নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়েছে মাঠে থাকা বিভিন্ন ফসল। জেলা কৃষি বিভাগের সর্বশেষ (৮ অক্টোবর) পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলায় চলতি বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৭১ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি তৃতিয় দফা বন্যায় রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১ লাখ ৪১ হাজার ৮১৩ জন কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় রোপা আউশ, আমন, পাট, শাক-সবজি, মরিচ, পান ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্যায় ক্ষতি হয়েছে।টানা চতুর্থ দফা বন্যায় জেলার ৩৭ হাজার ৬১১ জন কষকের ৫ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আত্রাই ও মান্দা উপজেলায়। আত্রাই উপজেলায় ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমির রোপা আমন, মান্দায় ১ হাজার ৭২৫ হেক্টর রোপা আমন, ৩০ হেক্টর জমির সবজি নিমজ্জিত হয়।

আরোও পড়ুন:নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি, পানির নিচে নিমাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট

নওগাঁয় বন্যায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

সরেজমিনে দেখা যায়, মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, পাঁজরভাঙা, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি, কালিকাপুর, চক কালিকাপুর এলাকার বিভিন্ন বিলের হাজার হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে আছে। পানি নামতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা চাষিদের। পেঁয়াজ, মরিচ, আলুসহ বিভিন্ন সবজি ও ডাল জাতীয় ফসলের বীজ সংগ্রহ করে নিরুপায় হয়ে বসে আছেন চাষিরা।

মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকগৌরি এলাকার তোফাজ্জাল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আলু, পেঁয়াজ লাগনোর জন্যে বীজ সংগ্রহ করে রেখেছি। অন্যান্য বছর এ সময় পানি নেমে যেতে শুরু কওে, এবার শেষ সময়ে আবার বন্যায় বেকায়দতায় পড়েছি। ৫ মন পেঁয়াজ রেখেছি লাগাতে, কিন্তু ভাবছি যে দাম বাজারে-বিক্রি করে দিই।’

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পানি নামতে দেরী হবে। যাদের উঁচু ভিটায় সবজি চাষ করার মতো ছিল তারা বুদ্ধি খাটিয়ে চাষ করেছে। অল্প জমি হলেও প্রচুর টাকা পেয়েছে। বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা এতো দামের সবজি আমার জীবনে কোনদিন দেখিনি।

উপজেলার চকরঘুনাথ গ্রামের সাজেদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার চার বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানের জন্য তৈরি করা ৫ কাঠা জমির বীজতলাও তলিয়ে গেছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, টানা চতুর্থ দফা বন্যায় ৩৭ হাজার ৬১১ জন কৃষকের ৫ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। নতুন করে কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রথম দফা বন্যায় ২৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে গেছে আর নতুন করে কোন ক্ষতির শঙ্কা নেই।

উল্লেখ্য, নওগাঁয় এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি ৭১ কোটি টাকা। প্রতিবছর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন এ অঞ্চলের মানুষ। মাছচাষি ও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ার কারণ হিসেবে ভুক্তভোগীরা দুষছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)। বাঁধের ভাঙা ভালোভাবে মেরামত না করায় প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ বন্যার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ