নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানিয়েছেন, পাটকল শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা হবে আগামী মাসের (নভেম্বর) মধ্যেই।

আজ বুধবার (২১ অক্টোবর ২০২০) সচিবালয়ে বিজেএমসি’র বন্ধ ঘোষিত মিলগুলোর অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন ।

পাটমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ৮টি মিলের শ্রমিকদের পাওনা বাবদ মোট ১৭শ ৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকা অর্থ বিভাগ থেকে পাওয়া গেছে। যা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলার ইস্টার্ন জুট মিল শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।

বেসরকারিখাতে নতুন করে মিলগুলো চালু করা হবে উল্লেখ করে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, আমরা প্রথমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবো। এরপর ব্যাংক লোনসহ বিভিন্ন পাওনা পরিশোধ করবো। এর মধ্যে আমাদের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলবে। আমরা বসে নেই। পিপিপি প্রক্রিয়ায় একটু সময় লাগবে। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ মিলগুলো আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালু করতে।

‘আমাদের পুরনো মেশিন আছে, সেগুলো কারা নেবে। সেগুলো বিক্রি করার পর আধুনিকায়ন করতে হবে। আর যারা নেবে তারা আধুনিকায়ন করবে, তাদের তো সে সময়টা দিতে হবে। একটি মেশিন আনতে গেলে দুই মাস সময় লাগে। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। আর একটা বিষয় যারা লিজ নেবে তারা পুরাতন মেশিন নেবে কিনা সে বিষয়সহ লিজ প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। সব মিলিয়ে সামনের বছরের শুরুর দিকে লিজ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে বলে আশা করা যায়। ’

পাটমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বন্ধ ঘোষিত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত এবং মিলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে মিল ও বিজেএমসি’র অন্যান্য সম্পত্তির যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে অনুসরণীয় কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং বিজেএমসি’র সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় জনবলের যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে সুপারিশ প্রদানকল্পে সরকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি পৃথক কমিটি গঠন করেছে। আশা করা যায় যে, বর্ণিত কমিটি দু’টির সুপারিশের আলোকে বন্ধ ঘোষিত মিলগুলো নতুন আঙ্গিকে পুনরায় চালু হবে এবং এভাবে পুনরায় চালু হওয়ার পর মিলে পূর্বের অভিজ্ঞ শ্রমিকরা আবারও কর্মসংস্হানের সুযোগ পাবেন।’

পাটকল বন্ধের ফলে উৎপাদিত পাটপণ্যগুলো যেমন চট, ছালা ও বস্তা এখন কোথা থেকে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাটকল বন্ধ হওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি যাতে ধ্বংস না হয় সেজন্য আমরা এ কাজ করেছি।

পলির বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ বা সোনালি ব্যাগ আনার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল সেটা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু চোরাই পলি ব্যাগ বাজারে আসবে ও থাকবে। আমরা সবসময় মোবাইলকোর্ট দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে তারা অভিযান চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, পাটের সোনালি ব্যাগ নিয়ে গবেষণা চলছে। আমরা শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডসেক করার পর এ বিষয়ে কাজ করবো। যেহেতু আমরা একটি ফেসে আছি, তাই এটা নিয়ে কী করবো পরবর্তীসময়ে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপরিণামদর্শী ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সচেতনতার দরুন প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের কদর ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বিজেএমসি-র উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করা এবং করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও পাট ও পাটজাত পণ্য হতে রফতানি আয়ে গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি (৮.১০%) অর্জিত হয়েছে। এ খাত ৮৮২.৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্হানে উঠে এসেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ