অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি মৌসুমে (জুলাই ২০২২-জুন ২০২৩) বৈশ্বিক পাম অয়েল বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে শঙ্কা রয়েছে। বাজার চাঙ্গার অপেক্ষায় বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা। তারা বাজারে প্রবেশের আগে দাম কতটা নিচে নামে তা দেখার অপেক্ষা করছে। এসব তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)। খবর দ্য হিন্দু।

ইউএসডিএ বলছে, গত মৌসুমের বেশির ভাগ সময় দাম বেশি থাকার কারণে ভেজিটেবল অয়েল বা উদ্ভিজ্জ তেলের বাণিজ্য সংকুচিত হয়েছে। জুলাইয়ের ‘অয়েলসিডস: ওয়ার্ল্ড মার্কেট অ্যান্ড ট্রেড’ রিপোর্টে সংস্থাটি বলছে, সেই সংকোচনের হারের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে পাম অয়েল।

এ সময় সর্বোচ্চ আমদানি কমিয়েছে চীন। দেশটিতে উদ্ভিজ্জ তেলের চাহিদা কমে এসেছে অর্ধেকে। তথ্য বলছে, চীনে পাম অয়েলের চাহিদা অনেক কমে গেছে, রফতানি পূর্বাভাসও ২০১৫-১৬ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। কারণ আমদানিকারকরা অভ্যন্তরীণ সরবরাহের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং তাদের মজুদের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে।

পড়তে পারেন: সর্বনিম্নে নেমেছে ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম

ইউএসডিএ বলছে, সম্প্রতি দাম কমে আসা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ সালে পাম অয়েলের বৈশ্বিক বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই, কেননা কিছু ক্রেতা এখনো অপেক্ষা করছে আবার বাজারে প্রবেশের আগে দাম কতটা কমে তা দেখার জন্য।

ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল নীতি চলতি বছর বিশ্ববাজারে বেশ বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। তাতে যেমন পণ্যটির সহজলভ্যতা প্রভাবিত হয়েছে, তেমনই প্রভাব পড়েছে দামেও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রফতানি নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং রফতানি ত্বরান্বিতকরণ কর্মসূচির বাস্তবায়নই আমদানিকারক দেশগুলোকে পাম অয়েলের দামের তীব্র হ্রাসের মুখোমুখি ফেলেছে।

সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারের বাধাগুলো কমে আসা এবং সম্মিলিত রফতানি কর ও শুল্ক কমে আসা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশটি এখন বিশ্ববাজারের জন্য আরো বেশি বেশি পাম তেল সহজলভ্য করে তুলছে। ফলে চলতি বছর পাম অয়েলের দাম সবচেয়ে নিচে নেমে যায়।

পড়তে পারেন: বিশ্ববাজারে কমলো দাম, দেশে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন

উদ্ভিজ্জ তেলের গত বছরের বাজার বিশ্লেষণ করে ইউএসডিএ বলছে, এ তেলের বাজার বেশকিছু কারণে কঠিন অবস্থায় রয়েছে। তার মধ্যে কানাডায় রেপসিড শস্যের ফলন কম হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন তেলের বেশি বেশি ব্যবহার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শীর্ষ রফতানিকারকদের কাছ থেকে সূর্যমুখীর তেল প্রাপ্তি স্থগিত হয়ে যাওয়া এর কারণ।

যেহেতু অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের সহজলভ্যতা কমে গেছে। কিছু আমদানিকারক তখন পাম তেল আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাতেই দাম বেড়ে যায় এ তেলের। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকট এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বেশি বেশি জৈব জ্বালানির পোড়ানোর কারণেও এর আগেই বেড়েছিল পাম অয়েলের দাম। তারপর গত এপ্রিলে পাম অয়েল রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এসব সংকট আরো ঘনীভূত হয়। কারণ বৈশ্বিক সরবরাহের অর্ধেকই পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে।

চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাপী তেলের বীজ উৎপাদনের পূর্বাভাস করা হয়েছে ৬৪৩ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন টন, যেখানে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৬০০ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন টন। ইউএসডিএর পূর্বাভাস বলছে, চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর বীজের উৎপাদন কিছুটা কমে আসবে। যদিও বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেল যেমন সয়াবিন তেল, রেপসিড তেল ও সূর্যমুখীর তেলের উৎপাদন বাড়বে বলেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ