নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে পেঁয়াজ আমদানি সংকট দেখা দিচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় পেঁয়াজ চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায়  প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে রাজশাহী জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর । দফায় দফায় কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উঠান বৈঠক এবং বিভিন্ন সমাবেশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহীতে তাহিরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। রবি ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে তাহিরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিলো ১৬ দশমিক ৭৩ টন। মোট উৎপাদন ছিলো ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজ সংকট নিরসনে চার অঞ্চলে ক্রপিং জোন স্থাপনের পরামর্শ

মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছর পেঁয়াজের চাষ করি। গত বছর ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলোম। বিভিন্ন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পেঁয়াজ চাষ করায় ফলনও ভালো হয়েছিলো। কিন্তু ভরা মৌসুমে আমরা তেমন নায্য দাম পাইনি।

তিনি বলেন, বীজ হিসেবে পেয়াঁজ ব্রিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ভালো আছে। এবছর ২ বিঘা জমিতে পেয়াঁজের চাষ করবো বলে জানান তিনি।

বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা শামিম শাহ্ বলেন, গত বছর রবি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলো তাই চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছিলো। আমার গ্রামে অনেকেই জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলো। যাদের উঁচু স্থানে বেশি জমি আছে তারা বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে পারে। তাতে তারা লাভবান হবে।

একই উপজেলার গোবিন্দ পাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ জানান, গত শীত মৌসুমে ১০ কাঠা জিমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। পেঁয়াজে আগাছানাশক স্প্রে সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ না করায় তিন ভাগের দুই ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পদ্ধতি না জানায় অল্প পেঁয়াজ পাই।বর্তমানে পেঁয়াজের ভালো দাম রয়েছে। তবে এ বছর কৃষি কর্র্মকতাদের পরামর্শ নিয়ে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করবো বলে জানান তিনি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, এবছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। সেখানে আগামী মৌসুমে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিচ্ছি। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক।

আর নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হলে সেখান থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রি করতে পারবে। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

আরও পড়ুন: ‘দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কৃষি বিভাগ থেকে পেঁয়াজ চাষের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাসহ উৎপাদিত পেঁয়াজ দেশের সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে তবে পেঁয়াজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।