পোল্ট্রি খামারিদের ব্যাংক ঋণ

পোল্ট্রি ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিদের ব্যাংক ঋণ মিলছে না, গুনতে হচ্ছে এনজিও-মহাজনের চড়া সুদ। এ অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়ছেন খামারিরা।

এছাড়া খামারিদের অভিযোগ রয়েছে নিবন্ধিত খামারিদের উপরই নজরদারি বেশি, নিবন্ধন না করলে তেমন কোন সমস্যায় পরতে হয় না তাদের।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর, ২০১৯) লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় অনুষ্ঠিত নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ক খামারি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় খামারিরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। এসময়ে দারিদ্র পীড়িত এ অঞ্চলের খামারিরা পুঁজির সংকট কাটাতে সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।



গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও বলা হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের ঋণ দেয়া হচ্ছে এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও বলছে ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারিদের ঋণ দেয়ার জন্য নিয়ম বেঁধে দেয়া আছে কিন্তু কাগজে কলমে যাই লেখা থাকুক বাস্তবতা আসলে ভিন্ন।

মূলত: সে কারণেই গ্রামের অসহায় প্রান্তিক খামারিরা স্থানীয় মহাজন, এনজিও’র কড়া সুদের জালে আটকা পড়ছেন কিংবা ডিলারদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান সাধারন খামারিরা, সেই সাথে চান স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা।

সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ৬২ জন ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী খামারি অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালাটির সার্বিক সহায়তায় ছিল আনোয়ার সিমেন্ট শীট লিঃ।

দলোগ্রামের খামারি রকিবুল বলেন, পুঁজির সংকটই তাঁদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। পোল্ট্রি স্পর্শকাতর শিল্প হওয়ায় ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র খামারিদের ঋণ দিতে রাজি হয় না।

নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তাঁরা কাউকে বলতেও পারেন না। অনেকটা নিরুপায় হয়েই তাঁদের কে ডিলারদের কাছ থেকে বাকীতে ফিড, বাচ্চা এমনকি ওষুধ নিতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে হয় তাঁদের। পরিশ্রমের ফসল প্রায় পুরোটাই যায় ডিলাদের পকেটে।

খামার নিবন্ধনের কথা বারবার বলা হলেও এ বিষয়ে খামারিরা খুব একটা আগ্রহী নন। লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ নূরুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় ব্রয়লার খামারির সংখ্যা ৬৬টি এবং লেয়ার খামারের সংখ্যা ৬০টি। তবে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা মাত্র ৫-৬টি।

কাকিনা’র ইয়াকুব আলীর প্রশ্ন নিবন্ধন করে লাভ কী? সাধারন খামারিদের অভিযোগ- কোন সমস্যা হলে নিবন্ধিত খামারিদেরকেই সবার আগে সরকারি নজরদারিতে পড়তে হয় অথচ যারা নিবন্ধন করে না তাদের কোন সমস্যা হয়না। এক হাজারের অধিক মুরগির খামারের নিবন্ধন ও নবায়ন ফি কমানোর দাবি জানান সাধারন খামারিরা।

একদিন বয়সী বাচ্চার দাম ৬০-৭০ টাকা হওয়ার কারণ জানতে চান তুষভান্ডার এলাকার খামারি ইউনুস। বাচ্চার সরকারি রেট নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

ইউনুস বলেন, বেশি দাম দিয়ে বাচ্চা ও ফিড কিনে বিক্রির সময় দাম পান না তাঁরা। বিগত কয়েক মাস ধরে ব্রয়লারের যে বাজার দর চলছে তার উন্নতি না হলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন খামারিরা।

কালিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রবিউল হাসান খামার গড়ার পাশাপাশি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্যও খামারিদের উৎসাহিত করেন।

লালমনিরহাটের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইদুর রহমান জানান, সরকারি টিকার দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

তিনি বলেন, বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন উৎসাহিত করতে প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বায়োগ্যাস প্রকল্পে ৯ হাজার টাকা ক্যাশ ব্যাক দিচ্ছে ইডকল।

পোল্ট্রি খামারিদের ব্যাংক ঋণ মিলছে না, গুনতে হচ্ছে এনজিও-মহাজনের চড়া সুদ এরফলে তৃণমূলর খামারিরা বেশ দু:সময় কাটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: লোকসানে অনেক পোল্ট্রি খামারি ব্যবসা ছাড়ছেন, সরকারকে উদ্যোগের আহ্বান