মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনায় রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। মহামরির শুরুতে ধাক্কা খেয়ে আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি এখানকার প্রান্তিক খামারিরা। বর্তমানে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম, খামারে উৎপাদিত দুধ বিক্রি হচ্ছে না ঠিক মতো। চলমান পরিস্থিতিতে প্রণোদনা না পেলে পথে বসবেন রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় প্রতি বছর দুধের চাহিদা ধরা হয় ২ দশমিক ৬০২ লক্ষ মেট্রিক টন। বছরে দুধ উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৭৮৭ লক্ষ মেট্রিক টন। জেলায় দুধ বাড়তি উৎপাদন হয় ১ দশমিক ১৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন। এ ছাড়া চলতি মাসের দুধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ৩১৭। এ পর্যন্ত দুধ অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৩৪৮।

২০০৩ সালে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে খামার গড়ে তুলেছিলেন জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কুটিবাড়ী এলাকার মেহেদী হাসান। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২ টি গরু রয়েছে তার খামারে। তার ৫ টি গাভী থেকে দিনে দুধ পান ৪৫ থেকে ৫০ লিটার। যাবতীয় সব খরচসহ সব মিলিয়ে ভালোভাবে দিন পার করতে তিনি।

কিন্তু করোনার মধ্যে দুধের উৎপাদন ঠিক থাকলেও সব কিছু বন্ধ থাকায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। তিনি জানান, দিনে খামারে খরচ হয় ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকা। বিন্তু লক ডাউন থাকায় বিক্রি তো দূরের কথা দুধ নেওয়ার মতো কোন লোক ছিলো না। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। সব কিছুর দাম বাড়তি। বিশেষ করে ফিড, খড় বা আউড় কিনে খাওয়াতে হিমশিম খেয়েছি।

তিনি বলেন, খামারের খরচ যোগাতে সেই সময় ২ লাখ টাকার গরু বিক্রি করেছি। সেই ক্ষতির বোঝা এখনো টানতেই আছি। করোনায় সব ওলট পালট করে দিয়েছে। সরকারি সহয়তা না পেলে হয়তো বা খামার টেকানে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

একই এলাকার দুগ্ধ খামারি নাজনীন নাহার বলেন, করোনার আগে যে পরিমাণ দুধ খামার থেকে উৎপাদন হতো বর্তমানেও একই পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়। তবে করোনায় গরুর খাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় খামারে ব্যাপক খরচ হয়। কিন্তু লকডাউনে ডেইরি ফার্ম ও হোটেলে দুধ বিক্রি থাকায় পানির দামে দুধ বিক্রি করতে হয়েছে। এমনকি দুধ কেনার মতো কোন লোক ছিলো না। এতে অনেক ক্ষতিতে পড়েছি। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অনেক কষ্টের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহা. ইসমাইল হক এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চললেও করোনায় অনেক কিছুই স্থবির হয়ে যায়। করোনায় দুধ উৎপাদনে তেমন একটা ঘাটতি ছিলো না। কিন্তু বিক্রি বা মোভমেন্ট করার মতো তেমন কোন অপশন ছিলো না। এছাড়া লকডাউনে কোম্পানিগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে দুধ নেওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

প্রণোদনা না পেলে পথে বসবেন রাজশাহীর দুগ্ধ খামারিরা। প্রণোদনার ব্যাপারে তিনি বলেন, জেলার নয়টি উপজেলাতে প্রণোদনা নিয়ে প্রান্তিক খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তালিকা পেলে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে নাম আসলে খামারিদের মাঝে প্রণোদনা বিতরণ করা হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ