মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিসহ কৃষি খাতে ৪ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সুবিধা ঘোষণা করে সরকার। এই প্রণোদনা ঋণ সুবিধা ও নগদ সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনায় বিগত বছরগুলোতে খামারিরা নিবন্ধনে আগ্রহ না দেখালেও বর্তমানে খামার নিবন্ধনে ঝুুঁকেছে খামারিরা।

পোল্ট্রি নীতিমালা অনুযায়ী ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করে খামার নিবন্ধন করা হয়। গাভির খামারের ক্ষেত্রে ১০ টির উপর গাভি থাকলে নিবন্ধন করা হবে। এক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ টি গাভি থাকলে ‘সি’ শ্রেণি, ২১ থেকে ৫০ টি ‘বি’ শ্রেণি, ৫০ উর্ধ্বে ‘এ’ শ্রেণি। ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৪০ টি ‘সি’ শ্রেণি, ৪১ থেকে ৬০ টি ‘বি’ শ্রেণি, ৬০ এর উর্ধ্বে ‘এ’ শ্রেণি। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদা আলাদা ফি প্রদানের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসেবে জেলায় হাঁস, মুরগি, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, গাভীসহ গবাদিপশু ও পোল্ট্রির মোট ১৪ হাজার ২২০ টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৯৬ টি পোল্ট্রি খামার অনিবন্ধিত এবং নিবন্ধিত খামার ১২৪ টি। যা বর্তমানে ২৯৩ টিতে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে ১৪৬ টির নিবন্ধন করোনাকালীন প্রণোদনা সুবিধাকে সামনে রেখে হয়েছে। করোনাকালে গাভি খামার নিবন্ধন হয়েছে ৯৪ টা, হাঁস-মুরগি ৪৭ টা, ভেড়া ও ছাগল ৫ টা।

রাজশাহীতে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে অধিকাংশ খামার। আর নিবন্ধনহীন খামারগুলো সরকারের নজরদারির বাইরেই থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামার নিবন্ধন নীতিমালায় দুর্বলতা এবং খামারিদের গাফিলতির কারণেই খামারগুলো চলছে নিবন্ধন ছাড়াই। মূলত রাজস্ব ফাঁকি দিতেই খামারিরা নিবন্ধন করছেন না।

এছাড়া নিবন্ধনের সুবিধা-অসুবিধা ও ভোগান্তি বিবেচনায় নিবন্ধন করতে আগ্রহী হচ্ছে না খামারিরা। তবে করোনাকালে প্রাণিসম্পদ বিভাগের তৎপরতা ও সহযোগী এনজিওগুলোর কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামার নিবন্ধন বাড়ছে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার খামারি সাগর আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খামার নিবন্ধন করে তেমন কোন লাভ দেখছি না। খাদ্যের দাম বেড়েছে, ঔষধের দাম বেড়েছে। ওদিকে মুরগি-ডিমের দাম কম। ক্ষতি হলে সরকার কোন অনুদান দেয় না। আর নিবন্ধন করে রাখলে বছর বছর রেন্যু করতে হবে। তারপরেও খামার নিবন্ধন করতে হবে। অনেকেই করছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, খামার নিবন্ধন করলে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। সরকারিভাবে যে তালিকা করে রাখা হয়েছে তার চেয়ে খামার সংখ্যা বাড়ছে। রাজশাহীতে লেয়ার, ব্রয়লার, হাঁসের খামার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। কিন্তু নিবন্ধন তেমন বাড়েনি। তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ নিতে অনেক খামারি নিবন্ধন করছে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া নগদ কিছু সহায়তায় নিবন্ধনকারী খামারিদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে এমন কারণে খামারিরা নিবন্ধনে আগ্রহী হচ্ছেন। আর আমরা নিবন্ধন করতে উৎসাহ প্রদান করছি। আর একটা সময় নিবন্ধন নিয়ে খামরিদের ভয় ছিল। তারা নিবন্ধন করতে চাইতো না। কিন্তু এখন সেই ভয় নেই, খামারিরা নিজ উদ্যোগে নিবন্ধন করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসমাইল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খামার নিবন্ধন এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আর করোনাকালে প্রণোদনা ঋণ তো আছেই তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য অনেক খামারিই নিবন্ধন করছেন। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

প্রণোদনা পেতে রাজশাহীতে খামার নিবন্ধন বাড়ছে বিষয়টি নিয়ে এই কর্মকর্তা আরোও বলেন, অচিরেই খামার নিবন্ধনের জন্য বলা হবে। তখন সবগুলো খামার নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। তখন কেউ নিবন্ধন না করলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ