নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফেনীতে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এখন পর‌্যন্ত অজ্ঞাত রোগে মারা গেলে ৫০ হাজার লেয়ার-সোনালী মুরগি। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, মুরগি মারা যাওয়ার নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। মুরগি ঝিমাচ্ছে আর সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা দেওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যেই খামারের অধিকাংশ মুরগি মারা যাচ্ছে। হটাৎ মুরগি মারা যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা।

ফেনী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব আলম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শতাধিক খামারির জেলায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লেয়ার মুরগি। ৪৫ হাজার লেয়ার মুরগির প্রায় প্রতিটি মুরগি বিক্রি হতো ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। ৫ হাজারের কিছু বেশি সোনালী এবং হাজার পাঁচেক ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। হিসাব করলে ২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ”

অজ্ঞাত রোগ সম্পর্কে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, “শীতের পর থেকে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে প্রতিবছরের মতো এবারও বার্ড ফ্লু আর সাথে রাণীক্ষেত রোগে এসব মুরগি মারা গেছে। মুরগি মারা যাওয়ার বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ভালো বলতে পারবেন হয়ত।”

প্রতিবছর এভাবে কোটি টাকা লোকসান রোধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই খামারি বলেন,“ আমাদের দেশে বায়োসিকিউরিটি ঠিক নেই। কারো খামারে রোগ দেখা দিলে তিনি অন্য কাউকে জানান না। ফলে মানুষ, পাখি, কিংবা খামার পরিদর্শন করার ফলে অন্য আরেকটি খামারে সংক্রমিত করে। খামারিরা সচেতন না। মরা মুরগি মাটিতে পুঁতে না ফেলে পুকুর, ডোবা, কিংবা গোপনে বিক্রি করে দেন। শেষে বিষয়টি সবার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, অজ্ঞাত এ রোগে ফেনীর শতাধিক খামারির হাজারো মোরগ ও মুরগি মারা গেছে। অনেক খামারির কোটি কোটি টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। রাণীক্ষেত কিংবা বার্ড-ফ্লু রোগের ধারণায় চিকিৎসা করেও কোন ফল আসছে না।

বাচ্চা ছোট অবস্থায় কিংবা লেয়ারের পুলেট অবস্থায় ভ্যাকসিন শিডিউল ঠিক ছিল। ভারত থেকে দেশে আসে এসব ভ্যাকসিন। বেশিরভাগ সময়ে ভ্যাকসিনের কার‌্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ঠিকমতো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগে মুরগি মারা যায়।

পোলট্রি খামারি মুহিউদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কম বলেন, ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লেয়ার মুরগির শেড চালু করেছিলাম। বেশ ভালো লাভ হয়েছিল। এরপর খামার বাড়ানোর চিন্তা করি। মুরগি তুলেছিলাম ঠিক কিন্তু কপালে সহ্য হলো না। প্রায় লেয়ার, সোনালী মিলিয়ে ৬ হাজার মুরগি মারা গেলো। এখন কি করবো বুঝতে পারছিনা। ঋণ কিভাবে শোধ করব?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা খামার পরিদর্শন করেছেন। এখন পর‌্যন্ত কোন মুরগি মারা যাওয়া বিষয়ে খবর পাইনি। খামারিদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরোও পড়ুন: মুরগির রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ