নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজে ৫-৭ টাকা কমায় হতাশ চাষিরা। এমনিতেই বর্তমান দামে উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভবান হতে পারছিলেন না বলে দাবি কৃষকের। তবে, দাম কমায় মাথায় হাত তাদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো না থাকায় এবং হালকা বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাটি ভেজা থাকায় পেঁয়াজ তুলতে পারেননি চাষিরা। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে, ফের আমদানি বাড়ায় দাম কমেছে। চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজির কম বিক্রি করলে তেমন কোন লাভ থাকবে না। উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিন্তু দাম বাড়ছে না।

পড়তে পারেন: হু-হু করে বাড়ছে চাল-তেল পেঁয়াজের দাম, অসহায় জনগণ

জানা যায়, রাজশাহীর চার জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ‘তাহিরপুরি’ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এ পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বাড়িতে সংরক্ষণ করতে সহজ হওয়ায় চাষিরা সহজেই চাষ করতে পারেন। এছাড়া গুণে ও মানে অন্যান্য পেঁয়াজের চাইতে ভালো হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। বাজারে এ পেঁয়াজের বেশ কদর থাকায় বাজারজাত করা যায় নিমিষেই। জেলার মোহনপুর, তানোর, চারঘাট, বাগমারাসহ সবকটি উপজেলার বেশিরভাগই চাষ হয় এ পেঁয়াজ।

মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই ১ দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। বীজ পেয়াঁজ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম ভালো আছে কিন্তু আবার কমে গেলো। শুনলাম সারাবছরই নাকি পেঁয়াজের দাম থাকবে। হয়ত কথাটা সত্যি হবে না। পেঁয়াজের দাম কমা বাড়ার মধ্যেই আছে।

বাজারে যে হারে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচ্ছে, তাতে তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। শুধু উৎপাদন খরচই উঠে আসছে। আরেকজন পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘পিয়াজ উৎপাদনে ৯০০-৯৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তবে আবার বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ টাকা দরে। তাহলে আমাদের লাভ হবে কী করে?’

বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা শামিম শাহ্ বলেন, গত বছর রবি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। আশা করেছিলাম ভালো দাম পাবো। কিন্তু আবার দাম কমে গেলো।

পড়তে পারেন: বাজার সয়লাব দেশীতে, কমলো ভারতীয় পেঁয়াজের দাম

এই চাষি আরো জানান, অতিরিক্ত দামে কন্দ জাতের পেঁয়াজের বীজ কেনাসহ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ টাকা। বর্তমান দামে উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভের মুখ দেখছেন না কৃষক। এ অবস্থায় চলমান চারা জাতের পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণের দাবি কৃষকদের।

পড়তে পারেন: পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি আড়তদারদের। এ বিষয়ে রাজশাহীর কয়েকজন আড়তদার বলেন, পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না। বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। জেলায় হেক্টর প্রতি ১৬ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন ফলনে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এবং তা পূরণও হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আরো জানায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হেক্টরে ১৭ মেট্রিকটন হিসেবে এসব জমি থেকে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৩০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। অথচ রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

পড়তে পারেন: দেশীর কাছে হার ভারতীয় পেঁয়াজের

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা।

তিনি আরও বলেন, এবছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ লাগানোর জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হলে সেখান থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ