ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বন্যার আগেই নওগাঁর রাণীনগর-আবাদপুকুর রাস্তার হাতিরপুলে রতনডারি খালের উপর নির্মানাধীন সেতুতে ঠেকেছে পানি। বর্ষার পানিতে সেতুর স্লাব (ছাঁদ) ছুঁই ছুঁই হয়ে পড়ায় খাল দিয়ে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই এলাকার কয়েক গ্রামের দেড় হাজার মৎস্যজীবিরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। সেতুর উচ্চতা তুলনামূলক কম হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় রাস্তার দু’পাশে এক হাজারের অধিক মৎস্যজীবি রয়েছেন। রাস্তার দক্ষিণ দিক থেকে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকাযোগে রক্তদহ বিলে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া ঝিনা,আকনা,লোহাচুড়িয়া ও বড়গাছা এলাকার ব্যবসায়ীরা বর্ষার সময় খাল পথে নৌকা নিয়ে বগুড়ার সান্তাহার থেকে বিভিন্ন মালামাল পরিবহণ করে থাকেন। কিন্তু খালের উপর নির্মাণাধীন সেতুটি একেবারে নিচু হওয়ায় বন্য আসার আগেই ভারী বর্ষণের পানিতে সেতুর তলা ছুঁই ছুঁই হয়ে পড়ায় নৌকা চলা চল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে কয়েক গ্রামের মৎস্যজীবি ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম দূর্ভোগে।

জানা গেছে, রাণীনগর-আবাদপুকুর রাস্তার রাণীনগর সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে রতন ডারি খালের উপর ব্রিটিশ আমলে চুন-সুরকি দিয়ে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। ব্রীজটি হাতির পিঠের ন্যায় হওয়ায় হাতিরপুল নামে পরিচিতি পায়। এর পর রাস্তাটি প্রথম পাকা করণের সময় হাতিরপুল ব্রীজটি মজবুত হওয়ায় ওই ব্রীজ রেখেই অন্যান্য ব্রীজ নির্মাণ করে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় রাণীনগর-আবাদপুকুর ১৪ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ করা হয়।

দীর্ঘ দিন পরে রাস্তায় যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং জীবন মান উন্নয়ন ও ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটাতে রাণীনগর থেকে সরাসরি ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য দু’বছর আগে এলজিইডি থেকে রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। এর পর গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে রাণীনগর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা প্রসস্থ্য ও মজবুত ভাবে পাকাকরণ এবং রাস্তার ২৬টি কালভার্ট ও চারটি ব্রীজ নির্মানসহ ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার দেয়া হয়। টেন্ডার শেষে ২০১৮ সালের শেষের দিকে ব্রীজ এবং কালভার্ট ভেঙ্গে নতুন করে নির্মান কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এর মাঝখানে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সেতু-কালভার্ট নির্মাণ ও রাস্তা পাকাকরণের কাজ শেষ করতে পারেনি।

এদিকে রাস্তার হাতিরপুল নামকস্থানে রতনডারি খালের উপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করলে তুলনা মূলকভাবে নিচু হওয়ায় সেতুটি আরো উচঁ করে নির্মাণ করার জন্য পূনরায় আদেশ আসে। আদেশের প্রেক্ষিতে ঠিকাদার ৩ ফিট উচ্চতা বাড়িয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। কিন্তু এর পরেও সেতুটির উচ্চতা না হওয়ায় তুলনামূলক নিচু হওয়ায় বন্যা আসার আগেই বর্ষার পানি সেতুর স্লাব ছুঁই ছুঁই হয়ে পড়েছে। ফলে খাল দিয়ে মৎস্যজীবি এবং ব্যবসায়ীদের নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম বেকায়দায় পরেছেন ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবিরা।

রাণীনগর উপজেলা মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি প্রফল্য চন্দ্র এবং সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ব্রীজটি নির্মাণ শুরু করলে একদম নিচু হওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ছে দেখে আমরা ব্রীজটি আরো ৮/১০ ফিট উচুঁ করে নির্মাণের দাবি জানাই। এতে কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে পরিদর্শন করে ব্রীজের মাথা ভেঙ্গে মাত্র তিন ফিট উচ্চতা বাড়িয়ে ব্রীজ নির্মাণ শুরু করেছে। বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোন ফল হয়নি।

এ ব্যাপারে প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মুনসুর রহমান বলেন, নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে এবং সংশ্লিষ্ঠদের নির্দেশনায় তিন ফিট উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের নওগাঁ জেলা প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন,সড়কের সাথে মিল রেখে সেতু নির্মাণ হচ্ছে । এর চাইতে বেশি উঁচু করলে রাস্তা থেকে সেতুর উচ্চতা অস্বাভাবিক হবে। এতে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যদিও এখই নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে তার পরেও ভারী বন্যা হলে ওই সেতুর বিকল্প হিসেবে অন্য সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে।

বন্যার আগেই সেতু ছুঁয়েছে পানি, ভোগান্তিতে দেড় হাজার মৎস্যজীবি শিরোনামে সংবাদের তথ্য রাজশাহী পোস্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।