বন্যায় মাছে ক্ষতি ৩৮২

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশব্যাপী চলমান বন্যায় মাছে ক্ষতি ৩৮২ কোটি টাকা হয়েছে। এবারের বন্যায় ১৩ হাজার ২০১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাভূমির মাছ ভেসে গেছে।

মৎস্য অধিদফতর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। অধিদফতরের হিসাব মতে, চলতি বছরের বন্যায় ৩৮২ কোটি টাকার মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষির সংখ্যা ৪৭ হাজার ৬৬২।

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে বন্যা আছে মাত্র দুটি জেলায়। বাকি ৩১ জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। প্রায় দেড় মাস পানির নিচে থাকা এসব জেলায় ক্ষয়ক্ষতি এখন স্পষ্ট হচ্ছে। বাড়িঘর, সড়ক ও ফসলি জমির পাশাপাশি এই বন্যায় মাছের ঘের ও পুকুরের বড় ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর অতিবৃষ্টি ও সবশেষ বন্যায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ৭৮৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। সেখানে মোট ৫২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকার ঘেরের বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে যায়।

তবে বেসরকারি সংস্থা বিসেফ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চলমান বন্যায় মৎস্যচাষিদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আরেক হিসাবে দেখা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মৎস্যজীবী এ ক্ষতির শিকার হন। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবিরা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও দারিদ্র্যের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে সংস্থাটির গবেষকেরা মনে করছেন।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ধান, সবজি ও পাটচাষিদের বন্যার ক্ষতি পোষাতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর আমনের বীজ যাতে কৃষকদের দেওয়া যায়, সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি উঁচু স্থানে আমন ও সবজির বীজতলা তৈরি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু মৎস্যচাষিদের এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী ও চাষিদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, কোনো ভুল যাতে না হয়, সে জন্য আবার তা খতিয়ে দেখছি। এই চাষিদের সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। আশা করি, তাঁদের কাছ থেকে আমরা সহায়তা নিয়ে মৎস্যচাষিদের পুনর্বাসন শিগগিরই শুরু করতে পারব।

মাছ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরপর দুটি দুর্যোগের আগে করোনার কারণেও দেশের মাছচাষিদের বড় ক্ষতি হয়েছে। সারা বছর মাছ লালনপালনের জন্য সাধারণত মার্চে পোনা সংগ্রহ করা হয়। ওই সময়ে লকডাউন ও যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় অনেক চাষি পোনা সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে তাঁরাও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আরিফ আজাদ সরকার থেকে আরও কিছু অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিনা মূল্যে পোনা দেওয়ার সুপারিশ করেন।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ২৫ লাখ পুকুর আছে। গ্রামের মানুষের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মৎস্য চাষের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৬ লাখ মানুষ সাগর ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে বানভাসিরা

বন্যায় মাছে ক্ষতি ৩৮২ কোটি টাকা শিরোনামের সংবাদটির তথ্য প্রথম আলো সংবাদ মাধ্যম থেকে নেয়া হয়েছে। প্রিয় মাছ চাষি এবিষয়ে আপনার এলাকার তথ্য জানাতে পারেন। আমরা তা তুলে ধরবো।