ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশের মাটিতেও আঙ্গুর চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব বলছেন কৃষি কর্মকর্তা ও চাষিরা। ইতোমধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা এটি চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে দাবি করছেন সেখানকার কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান আলী।

বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় সবুজ ও লাল বা বেগুনি রংয়ের আঙ্গুর। বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রামাঞ্চল প্রায় সর্বত্রই এই ফলটির চাহিদা থাকলেও আবহাওয়া, মাটি ও বাণিজ্যিক চাষের জ্ঞানের অভাবসহ নানা কারণে বাংলাদেশে এই ফলটি চাষের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি। তবে এখন সময় পাল্টেছে। বাংলাদেশের মাটিতে আঙ্গুর চাষে সফল হওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, তুরস্ক, চিলি, আর্জেন্টিনা, ইরান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও ফলটি প্রায় সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়।

 কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলছেন, সেখানে একজন চাষি বাণিজ্যিক উৎপাদনে সফল হয়েছেন এবং এরই মধ্যে ঢাকা থেকে কিছু বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরাও সেখানে গিয়ে দেখে এসেছেন। মহেশপুরের মাটি আঙ্গুরের জন্য উপযোগী। এখানে এই ফলটা হবে বলে আমরা আশা করছি।

একজন চাষি সফল হয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছেন এবং চলতি বছর তার বাগান আরও বিস্তৃত হয়েছে,” বলেন তিনি। আর যেই চািষ আঙ্গুর চাষ করে সফল হয়েছেন বলে কৃষি বিভাগ বলছে তার নাম আব্দুর রশিদ।

রশিদ বলছেন যে, তিনি দু’বছর ধরে আঙ্গুর চাষ করছেন এবং এর মধ্যে একবার ফল বাজারজাত করেছেন। এর আগে সবুজ আঙ্গুর চাষ করলেও এবার সাথে তিনি যোগ করেছেন লাল-বেগুনি আঙ্গুর।

আব্দুর রশিদ আরও কিছু বিদেশি ফলেরও চাষ করেছেন। এক সময় তার চিন্তায় আসে যে আঙ্গুর উৎপাদনের চেষ্টা করবেন। এর মধ্যে ভারতে গিয়েছেন এবং সেখানে এটি চাষ করতে দেখেছেন, যা তার মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে। এসব দেখে আমার মধ্যে চিন্তাটা এলো যে, এটা বাংলাদেশেও সম্ভব হবে। তারপর থেকেই আমি চারা সংগ্রহ করার চেষ্টা শুরু করলাম, বলছিলেন তিনি। পরবর্তীতে চীন, ইটালি ও ভারত থেকে প্রবাসীদের মাধ্যমে আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করে মহেশপুরে বাগান শুরু করেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ চাষ করতে পারেন:

দেশের মাটিতে বাণিজ্যিক আঙ্গুর চাষে সফল মহাসিন 

নওগাঁর মহাদেবপুরে মিষ্টি আঙ্গুর চাষে সফল আইনজীবী সামিম

দেশের মাটিতে ভারতীয় আঙুর চাষে সফল মহাসিন

এখন ৩৮ শতক জমিতে দুশ’র বেশি আঙ্গুর গাছ আছে তার। গত বছর ফলন ভালো হয়েছে বলে এবার বাগানের পরিধি কিছুটা বাড়িয়েছেন।

গতবার সবুজটা করেছিলাম। এবার সামনে লাল-বেগুনিটার খবর দিতে পারব বলে আশা করছি, বলছিলেন তিনি। কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানিয়েছেন, গতবছর আব্দুর রশিদের আঙ্গুর স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি দুশ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ফলনটাও ভালো হয়েছে। ফলটাও স্বাদের। তবে সবুজটার মধ্যে বীচি আছে। হয়তো আরও ভালো জাত পেলে সেটা আরও ভালো হবে মহেশপুরে।

সাধারণত আঙ্গুর চাষের জন্য এমন জায়গা দরকার হয় যেখানে পরিমিত বৃষ্টি হবে কিন্তু মাটিতে পানি জমে থাকবে না। আবার আবহাওয়া হতে হবে শুষ্ক ও উষ্ণ। আঙ্গুর পাকার সময় বৃষ্টি হলে আঙ্গুরের গুণাগুণসহ আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার আঙ্গুর পাখি খেয়ে ফেলে বলে এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়।

বাংলাদেশে আঙ্গুরের জন্য নানা চেষ্টা বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা হয়েছে। উনিশশ’ নব্বই সালে গাজীপুরের বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আঙ্গুর চাষের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ব্যক্তি বা বেসরকারি উদ্যোগে খুব বেশি প্রচেষ্টার কথা আগে শোনা যায়নি। যদিও বাংলাদেশের মাটি আঙ্গুরের জন্য উপযুক্ত বলেই বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা। পরিমিত মাত্রায় সার ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে একটি আঙ্গুর গাছই বছরের পর বছর ধরে ফলন দিতে পারে।

বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আঙ্গুর গাছ ছাঁটাই করলে মার্চ-এপ্রিলে ফল পাওয়া যায়। এরপর আবার শীতের সময়ে ফলন আসে।

আঙ্গুর পাকার সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে পলিথিন জাতীয় কাগজ দিয়ে গাছ ঢেকে দিতে হয়, কারণ বৃষ্টির পানি লাগলে আঙ্গুর ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে আবার আঙ্গুর পুরোপুরি পেকে যাবার পরেও সংগ্রহ না করা হলে পরে তার মিষ্টতা নষ্ট হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পচন ধরতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে আঙ্গুর চাষে সফল হওয়া সম্ভব সংবাদের তথ্য বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ