নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বাজারে ডিম পাড়া লেয়ার মুরগি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। ডিমের দাম বাড়ায় লেয়ার মুরগি খামারিরা বিক্রি করছেন না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে মাংস উৎপাদনকারী দেশী মুরগির আদলে আবিস্কৃত সোনালী মুরগির হাইব্রিড প্রজাতি বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার কয়েকজন লেয়ার খামারির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিমের দাম বাড়তি থাকায় মুরগি বিক্রি করছেন না তারা। ডিমের পিস ৭ টাকা কিংবা তারচেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লোকসান হয় খামারিদের। সেসময় মুরগি বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকেনা। এছাড়া লেয়ার মুরগির ডিম দেওয়ার পর অনুৎপাদনশীল হয়ে গেলেও বিক্রি করেন খামারিরা।

পড়তে পারেন: ব্রয়লারের কেজিতে কমেছে ১৫, সোনালী ৪০

খামারিরা বলছেন, যেসব মুরগি ডিম দেয়না সেসব মুরগি কার্ল করা হয়। অর্থ্যাৎ পুরো খামার জুড়ে ডিম না দেওয়া মুরগি চিহ্নিত করে তা আলাদা করে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে ডিমের দাম বাড়ার কারণে কয়েকদিন পরপর বা অনিয়মিত ডিম দেওয়া মুরগিগুলো বিক্রি করছেন না তারা। ফলে বাজারে দেখা মিলছে না লেয়ার মুরগির।

শনিবার (১ অক্টোবর ২২) রাজশাহীর সাহেববাজার মুরগিপট্টি, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে লেয়ার মুরগির কোন অস্তিত্ত্ব নেই। বাজারে সেই জায়গা দখল করেছে হাইব্রিড জাতের সোনালী মুরগি।

রাজশাহীর সাহেববাজারের মুরগি ব্যবসায়ী লিখন হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। ডিমের দাম বাড়ার কারণে খামারিরা লেয়ার মুরগি বিক্রি করছেন না। বাজারে এখন সোনালী ও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে। এমনকি কক মুরগিও দেখা মিলছেনা।

পড়তে পারেন: ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগির সর্দির লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার

এই ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বাজারে সোনালী মুরগির আদলে আরেক ধরনের মুরগি এসেছে। এগুলো হাইব্রিড জাতের সোনালী। যেখানে আসল সোনালী মুরগি ৭০ দিনে ৬’শ কিংবা ৭’শ গ্রাম ওজন হয় সেখানে এই হাইব্রিড জাতের সোনালী ৪০ দিনে এককেজি হয়ে যায়। জনগণ বুঝতে পারছে না কোনটা আসল সোনালী মুরগি আর কোনটা হাইব্রিড। সোনালী মুরগির দামেই কিন্তু বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, সোনালী মুরগির নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আমাদের আছে যারা এই মুরগি চিনতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা বুঝতে পারেনা।

একই বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে এখন সোনালী মুরগি আর ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেশি। অন্যান্য মুরগি বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। সোনালী ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকা এবং ব্রয়লার বিক্রি করছি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। মুরগির দাম আরো কমবে।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কি পরিমাণ কমেছে জানতে চাইলে তিনি বলে, এক সপ্তাহ আগে সোনালী মুরগি ৩১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে আর ব্রয়লার ১৭৫ টাকা। এখন দাম কমেছে অনেকটাই। খামারিরা মুরগি উৎপাদনে ফিরেছেন তাই দাম কমছে।

রাজশাহী অঞ্চলে সর্বপ্রথম সোনালী মুরগি পালন শুরু করেছিলেন এনামুল হক। তিনি জয়পুরহাট থেকে বাচ্চা নিয়ে এসে রাজশাহীতে পালন করে বিক্রি করতেন। তাঁর ভাস্যমতে সোনালী মুরগির ব্রিডিং হচ্ছে। জাতের উন্নয়ন করা হয়েছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে এই হাইব্রিড সোনালী যার মাতাপিতা কিন্তু আদী সোনালী।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বাজারে সোনালীর নামে আরেক প্রকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে যা আমরা সোনালী নামেই খেয়ে চলেছি। আসল সোনালী মুরগির যে স্বাদ তা এই সোনালীতে নেই। দাম কিন্তু সোনালীরই। খামারিরা যেদিকে লাভবান হবেন সেদিকেই যাবেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ