ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাঠে-মাঠে সোনালী ধানের ঝলক। কাঁচা-পাকা ধানে কাস্তের ছোঁয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ধান কেটে ঘরে তোলার হরদম আয়োজন। কৃষাণীরা গোলা ঠিক করতে ব্যস্ত। মাঠগুলোতে হাসছে সোনালি রঙের ধান। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে পাকা ধানের ঘ্রাণ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষির আধুনিকীকরণে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ঝোড়ো বাতাসে অনেক খেতে লম্বা হওয়া ধানের গোছা হেলে পড়েছে। হেলে পড়া ধানে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। অন্যদিকে বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় সবজি চাষের মৌসুমও কিছুটা পিছিয়ে গেছে।

গত শনিবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা, চাঁদনীঘাট, মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ বিভিন্ন মাঠের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠে মাঠে আমন ধানের গাছ হেমন্তের রোদে ঝকমক করছে। বাতাসে হেলেদুলে নাচছে। কিছুদিনের মধ্যে এই ধানে পাক ধরবে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও সোনালি আভা ফুটতে শুরু করেছে।

দুই-তিন সপ্তাহ পরই এই ধান কাটা হবে। কৃষকদের মধ্যে এই ধান তোলার প্রস্তুতি চলছে। তবে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে বিলম্বে চারা রোপণ করায় এখনো সম্পূর্ণ ধান বের হয়নি। এদিকে সিত্রাংয়ের ঝোড়ো বাতাসে কোনো কোনো জমির ধান সম্পূর্ণ হেলে পড়েছে। কোনো জমির ধান পাটির মতো বিছানো।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

কালো ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক, ফলন ভালো দাম বেশি

বোরো ধানের সাথে চাষ করতে পারেন মাছ

বিঘায় ফলন ২২মণ ব্রিধান ৭৫, খুশি চাষিরা

অপ্রধান মসলা ধনিয়া চাষে ধনী ময়েজ

গতকাল দুপুরে মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বাহারমর্দান এলাকায় এ রকম হেলে পড়া ধান গবাদিপশুর জন্য কৃষককে কেটে নিতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার একাটুনা, উত্তরমুলাইম, কচুয়া, হিলালপুর, বাহারমর্দান, খিদুরসহ বিভিন্ন মাঠের জমিতে ধানগাছ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

সদর উপজেলার বাহারমর্দান এলাকার জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, ধান পাকতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। বেশির ভাগ ধানই বেরিয়ে গেছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে কিছু খেতের ধান পড়ে গেছে।

সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান গত বুধবার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ধানের বেশ ক্ষতি করি লাইছে (করে ফেলছে)। মাত্র একটা-দুইটা ধান বারইছে (বের হয়েছে)। এই ধান এখন ঘুমাই রইছে (ঘুমিয়ে আছে)। একদম ফ্লাট অই গেছে (একেবারে বিছিয়ে পড়েছে)। একাটুনা, উত্তরমুলাইম এলাকার অনেক বড় বড় টুমার (জমি) ধান হুতাইলাইছে (শুইয়ে দিয়েছে)। এসব জমিতে এখন আর আগের লাখান (মতো) ধান মিলতো নায় (মিলবে না)। সব চুছা অই যাইব (সব ধান চিটা হয়ে যাবে)।

হিলালপুরের সালেহ এলাহী কুটি বলেন, কিছু ধান কাত হয়ে পড়েছে, কিছু সম্পূর্ণ বিছিয়ে গেছে। তাঁর ১০ থেকে ১২ কিয়ার জমির ধান নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বেশির ভাগ খেতেই ধান বেরিয়ে গেছে। কিছু জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে পোকার আক্রমণ হয়েছে। কিছু জমির ধান লাল হয়ে গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে ধানে পাক ধরেছে। এ ছাড়া বড় বিপর্যয়ে পড়েনি আমন খেত। তবে সিত্রাংয়ে সদর উপজেলা, রাজনগরসহ জেলার বিভিন্ন মাঠে ধানের গাছ হেলে পড়েছে। কোথাও সম্পূর্ণ বিছিয়ে গেছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

এই সময়ে আমন ধানের যেসব পরিচর্যায় ফলন বাড়াবে

ধানের সবুজ-শুঁড় লেদা পোকা দমন কৌশল

ধৈঞ্চা পচানো সার দিয়ে ২৪০ একর জমিতে আউশ ধান চাষ

অর্ধেকে নামতে পারে শ্রীলঙ্কার ধান উৎপাদন

সদর উপজেলার মল্লিকসরাই, উলুয়াইল, বড়কাপন, রায়পুর, রসুলপুর, বিরাইমাবাদ, বুড়িকোনা, খৈসাউড়া, বানেশ্রী, পাড়াশিমইল, কান্দিগাঁও, সানন্দপুরসহ অনেক স্থানেই ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া রাজনগর উপজেলার ভূমিউড়া, ধুলিজুরা, পশ্চিমভাগ, কর্নিগ্রাম, ঘরগাঁও, নওয়াগাঁও, রক্তা, সুরুপুরাসহ বিভিন্ন মাঠের ধান হেলে পড়েছে।

রাজনগরের পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ভূমিউড়ার সুব্রত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তিনি পাঁচ কিয়ার জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে তিন কিয়ার জায়গার ধানই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৬০০ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে ফলন আশা করা হচ্ছে ২ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সব ধান বেরিয়ে গেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে কিছু জমির ধান হেলে পড়েছে। এসব খেতে ফলন কম হবে।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের অনেক আমন ধানই মাটিতে পড়ে গেছে। বিশেষ করে নিচু জমিতে পানি থাকায় আগে থেকেই যেসব ধানের গোড়া নরম ছিল, সেসব ধানের বেশির ভাগ মাটিতে হেলে পড়েছে। মাটিতে পড়ে যাওয়া ধানের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে যাবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ