মো. শাহ এমরান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কর্ন বা ভুট্টার সাইলেজ বাড়িতে নিজেই তৈরি করতে পারেন। অনেকে উচ্চমূল্যের কথা চিন্তা করে বাড়িতে তৈরি করেন না। আসলেই কি উচ্চদামে কর্ন সাইলেজ কিনে আসলেই কি আপনার খামার লাভবান হবে? লাভ খরচের হিসাব দেখলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে!

একটা ছোট হিসাব নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। ধরা যাক ১০ লিটার দুধের গাভী যার দেহের ওজন ৩০০ কেজি, তার দৈনিক কী পরিমান শক্তি/এনার্জি ও প্রোটিনের প্রয়োজন আছে।

একটি ১০ লিটার দুধের গাভীর জন্য কমবেশী প্রতিদিনের খাদ্য থেকে প্রায় ৯০ মেগাজুল শক্তি/এনার্জির প্রয়োজন। প্রশ্ন হলো এই ৯০ মেগাজুল শক্তির যোগান কীভাবে আসবে?

আমরা জানি, ১ কেজি দানাদার থেকে পাওয়া যায় ১০ মেগাজুল শক্তি, ১ কেজি কর্ন সাইলেজ থেকে পাওয়া যায় ২-২.৫ মেগাজুল শক্তি, ১ কেজি হাইব্রিড ঘাসেও ধরে নিলাম ১.৫-২ মেগাজুল শক্তি। বাজার দর অনুযায়ী সাইলেজের দাম ৮ টাকা (পরিবহন খরচ সহ)।

পড়তে পারেন: গরুর নতুন খামারের জন্য বকনা ও গাভীর প্রাপ্তিস্থান-মূল্য

৯০ মেগাজুল এনার্জি পেতে হলে: ফুড কম্বিনেশন- যদি সাইলেজ+ঘাস+দানাদার কিনে খাওয়াতে হয় তাহলে একটি ১০ লিটার দুধের গরুর জন্য প্রতিদিনের শুধু খাদ্য খরচ:

ক)৩ কেজি দানাদার+৩০ কেজি সাইলেজ= ৩৩০ টাকা, খ)৫ কেজি দানাদার+২০ কেজি সাইলেজ= ৩১০ টাকা, গ) ৩ কেজি দানাদার + ১৫ কেজি সাইলেজ + ১৫ কেজি হাইব্রিড ঘাস = ৩৩০ টাকা, লেবার+মেডিসিন+বিদ্যুৎ/পানির বিল গরু প্রতি ৭০ টাকা হলে মোট খরচ আসবে ৩৩০+৭০= ৪০০ টাকা।

যদি সাইলেজ+ঘাস নিজে করা যায় এবং শুধু দানাদার কিনে খাওয়ানো হয় তাহলে ১০ লিটার দুধের গাভীর প্রতিদিনের খরচ: নিজে সাইলেজ তৈরি করলে কেজি প্রতি খরচ ২ টাকা।

ক)৩ কেজি দানাদার+৩০ কেজি সাইলেজ= ২১০ টাকা, খ)৫ কেজি দানাদার+২০ কেজি সাইলেজ= ১৯০ টাকা, গ) ৩ কেজি দানাদার + ১৫ কেজি সাইলেজ + ১৫ কেজি হাইব্রিড ঘাস = ২১০ টাকা, লেবার+মেডিসিন+বিদ্যুৎ/পানির বিল গরু প্রতি ৭০ টাকা হলে মোট খরচ আসবে ১৯০+৭০= ২৬০ টাকা।

পড়তে পারেন: গরু-ছাগলের জন্য সাইলেজ তৈরির পদ্ধতি ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া

যে খামারি দুধের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা বিক্রি করছে সাইলেজ কিনে খাওয়ালে তার ১০ কেজি দুধ বিক্রি করে লাভ থাকে (৪০০-৪০০) = ০ টাকা। দুধের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা লাভ থাকে (৫০০-৪০০) = ১০০ টাকা। দুধের দাম কেজি প্রতি ৬০ টাকা হলে তার লাভ থাকে (৬০০-৪০০) = ২০০ টাকা।

#যে খামারি সাইলেজ ও ঘাস নিজে করছে তার ১০ কেজি দুধ বিক্রি করে লাভ থাকে (৪০০-২৬০) = ১৪০ টাকা। দুধের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা লাভ থাকে (৫০০-২৬০) = ২৪০ টাকা। দুধের দাম কেজি প্রতি ৬০ টাকা হলে তার লাভ থাকে (৬০০-২৬০) = ৩৪০ টাকা।

তাহলে বুঝতেই পারছেন সাইলেজ কেন নিজে তৈরী করবেন। একজন দুগ্ধ খামারির জীবন যৌবন উপরের যে লাভের ক্যালকুলেশন দেখানো হলো বাস্তবে আরো বহুগুনে কঠিন। কারণ হলো নানা রকম ঝুঁকি।

পড়তে পারেন: যে কারণে খামারে ফ্যাটেনিং গরুর ওজন নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে

কিন্ত পকেট থেকে নগদ বেড়িয়ে যাবে সাইলেজ, দানাদার ও ঘাস কিনতে। আর আপনার নিজের পকেটে আদৌ আসবে কিনা বা আসলে আবার কোন ঝামেলায় কত দ্রুত বেড়ে হয়ে যাবে এই টেনশনে রাতের ঘুম হারাম।

অনেকেই বলবেন আরে ভাই মিষ্টি, পনির বানাও, ষাড় বাছুর বিক্রি করো তাহলে লাভ হবে। আমি তাদেরকে বলবো সবাই মিষ্টি পনির বানাতে পারবেনা এটা বাস্তবতা। আর এদেশে খামার করে এতটাই ঠেকে গেছি যে একজন খামারির থেকে সর্বস্ব নিংড়ে নেবার পর যদি ছিটেফোটা কিছু থাকে এটাও ভাগ্য বলে মনে করে হাসবেন আর উচ্চদামে ফিড, মেডিসিন, সিমেন আর ডাক্তারির পেছনে টাকা ঢালতে থাকবেন।

এটা সাইলেজ বিরোধী পোস্ট বা লেখা নয়। অনেকেই একে নানান দিকে প্রবাহিত করবার চেস্টা করবেন, সেটাও জানি। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে আবারও বলতে চাই নতুন খামারি ভাইদের যদি নিজে সাইলেজ+ঘাস করার পর্যাপ্ত জমি না থাকে এই ব্যবসাতে না আসাই ভালো। আবেগ অনুভুতি মিশিয়ে এই ব্যবসা করতেই হবে এমন কখনই ভাববেন না।

পড়তে পারেন: বড় নয়, মাঝারি দেশাল গরুর দিকে যে কারণে ঝুঁকছে খামারিরা

যারা উচ্চ দামে দুধ ও মাংস বিক্রি করছেন শহরে তাদের হয়তো পোষাবে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি প্রতি সাইলেজ, কারন তারা প্রিমিয়াম প্রাইস পায় দুধ ও মাংস বিক্রি করে যা আপনার আমার জন্য অনুকরণীয় নাও হতে পারে।

বিক্রেতা ভাইদের অনুরোধ করবো বছরে ৩ থেকে ৪ বার যদি আপনি ভুট্টা চাষ করেন তাহলে আপনি ৩ থেকে ৪ টাকা কেজিতে দিতে পারবেন সাইলেজ। আপনারা এখন ২ বার চাষ করছেন বিধায় দাম এত বেশী পড়ছে। সর্বপরি যে ক্রেতা সিদ্ধান্ত একান্ত তার উপর।

বাড়িতেই হবে ভুট্টার সাইলেজ, দেখুন লাভ-খরচের হিসাব লেখাটি লিখেছেন স্বপ্ন ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকার মো. শাহ এমরান।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ