ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গম গবেষণা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি গম ৩৩ গমের প্রথম ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জিংক সমৃদ্ধ জাত বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি কৃষকের জানা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এ গম বিঘায় ১৭ মণ ফলন পাওয়া গেছে। উচ্চফলনশীল এ গম চাষে কৃষকরা বেশ লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১১ অক্টোবর ২০১৭ খ্রি. অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক সারা দেশে চাষাবাদের জন্য জাতটি অবমুক্ত করা হয়। KACHU এবং SOLALA জাতের মধ্যে সিমিটে সংকরায়নকৃত এ জাতটি হারভেস্ট প্লাস ট্রায়ালের মাধ্যমে ২০১৩ সালে এদেশে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন প্রজন্মে বাছাইয়ের পর এ কৌলিক সারিটি বিএডব্লিউ ১২৬০ নামে নির্বাচন করা হয়। কৌলিক সারিটি বিভিন্ন নার্সারীতে ও ফলন পরীক্ষায় উচ্চ ফলনশীল প্রমাণিত হওয়ায় জাত হিসেবে অবমুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়।

পড়তে পারেন: গম ও ভুট্টা আমদানিতে ভারতের দিকে ঝুঁকছে আমদানিকারকরা

গত ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সিমিটের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসডিএ-এআরএস ল্যবরেটরীতে গমের ব্লাস্ট রোগের জীবাণুর কৃত্রিম সংক্রমণের মাধ্যমে পরীক্ষা করে জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া জাতটি যশোরের মাঠ পরীক্ষায় ও ব্লাস্টরোগ প্রতিরোধী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জাতটি জিংক সমৃদ্ধ এবং দানায় জিংকের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম

জাতের বৈশিষ্ট্য: জাতটির উচ্চতা মাঝারী (১০০-১০৫ সেন্টিমিটার)। কুশির সংখ্যা তিন থেকে পাঁচটি। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১১০-১১৫ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৭টি। জাতটি গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। জাতটি স্বল্প মেয়াদী এবং তাপ সহনশীল হওয়ায় দেরিতে বপনের জন্য খুবই উপযোগী। দানার রং সাদা, চকচকে ও আকারে মাঝারী (হাজার দানার ওজন ৪৫-৫২ গ্রাম)।

পড়তে পারেন: গম ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকছে রাজশাহীর চাষিরা

প্রযুক্তি হতে ফলন: হেক্টর প্রতি ফলন ৪০০০-৫০০০ কেজি

প্রয়োগের স্থানঃ দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা ছাড়া দেশের সর্বত্র আবাদের জন্য উপযোগী। তবে জাতটি বøাস্ট রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

উদ্ভাবনের বৎসর: ২০১৮

বপনের সময়: বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫-৩০ নভেম্বর (১-১৫ অগ্রহায়ণ) এবং বীজ হার ১৩০ কেজি/হেক্টর।

সারের মাত্রা: ইউরিয়া ১৫০-১৭৫ কেজি/হে., টিএসপি ১৩৫-১৫০ কেজি/হে., এমওপি ১০০-১১০ কেজি/হে., জিপসাম ১১০-১২৫ কেজি/হে. এবং বরিক এসিড ৬.২৫-৭.৫০ কেজি/হে.। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সার জমি তৈরির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে বাকি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটির pH মান ৫.৫ এর কম হলে হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজি (শতাংশে ৪ কেজি) হারে ডলোচুন গম বীজ বপনের কমপক্ষে ৭ দিন আগে প্রয়োগ করতে হবে। তিন বছর পর পর মাটির ঢ়ঐ মান পরীক্ষা পূর্বক জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।

পড়তে পারেন: মহাদেবপুরে রেকর্ড পরিমাণ উফশী জাতের গম চাষ

আগাছা দমন: চওড়া পাতা জাতীয় আগাছা দমনের জন্য বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ২৫ গ্রাম এফিনিটি পাউডার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ: মাটির প্রকার ভেদে ২-৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পর) হালকা ভাবে, দ্বিতীয় সেচ শীষ বের হওয়ার পূর্বে (বপনের ৫০-৫৫ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) হালকা ভাবে দিতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা: বীজ বপনের পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত পাখি তাড়াতে হবে যাতে জমিতে চারার সংখ্যা সঠিক থাকে। গম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন হলে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ (জিঙ্ক ফসফাইড বা ল্যানির‌্যাট) দিয়ে দমন করতে হবে।

পড়তে পারেন: গম চাষে বীজ বপন ও সার প্রয়োগ মাত্রা

রোগ-বালাই দমন: দেরিতে বপনকৃত গম ক্ষেতে পাতার দাগ রোগ দমনের জন্য শীষ বের হওয়ার সময় ৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।

ফসল কর্তন: গম গাছ সম্পূর্নরূপে পেকে হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে কাটা ও মাড়াইয়ের উপযুক্ত হলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালের দিকে কেটে দূপুরে মাড়াই করা উত্তম। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে সহজেই গম মাড়াই করা যায়। মাড়াই করার পর ৩-৪ দিন হালকা রোদে শুকিয়ে বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগ বা তার নীচে নামিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ