অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে খাদ্যশস্য ভান্ডারে চিন্তার ছাপ পড়েছে। চলতি মৌসুমে ইউক্রেনের কৃষকরা গত বছরের তুলনায় অর্ধেক গম ও ভুট্টা আবাদ করতে সক্ষম হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে গম উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। এখন নতুন দেশটির দিকে ঝুঁকছে আমদানিকারকরা।

যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের কৃষকরা যেহেতু দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে সেক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেন ছেড়ে বিকল্প উৎস খুঁজছেন। তাদের প্রথম নজর ভারতে। ফলে গম ও ভুট্টার দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।

পড়তে পারেন: বছরে সাড়ে ৫ কোটি টন ভুট্টা-গম রপ্তানি ইউক্রেনের, এবার শঙ্কা!

ভারত তাদের মোট উৎপাদনের ১ শতাংশেরও কম গম রফতানি করে। অন্যদিকে আইজিসি বলছে, গম রফতানির জন্য ভারত এরই মধ্যে মিসরের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করতে যাচ্ছে। এছাড়া তুরস্ক, চীন, সুদান, নাইজেরিয়া ও ইরানের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। গত কয়েক মাসে দেশটি বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যাপক গম রফতানি করেছে। এছাড়া পশুখাদ্য হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডেও দেশটির গম রফতানি বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণে ভারত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ টানা ষষ্ঠবারের মতো দেশটিতে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে মৌসুম শেষে দেশটিতে গমের ব্যাপক উদ্বৃত্ত থাকবে।

ব্যবহারের দিক থেকে গম বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ খাদ্যশস্য। চলতি মাসের শেষে ভারতে ২ কোটি ৪০ লাখ টনেরও বেশি গম মজুদ থাকবে। এমনটা জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের (আইজিসি) ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ আলেকজান্ডার কারাভায়েস্তেভ।

পড়তে পারেন: ভারতের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ, ৩ মাসে ১২ লাখ টন গম আমদানি

সম্প্রতি এক অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে আইজিসির বেশির ভাগ বিশ্লেষকই বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে মতামত দিয়েছেন। বৈঠকে খাদ্যশস্য সরবরাহে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিকল্প উৎস নিয়েও আলোচনা করা হয়। বিশ্লেষকরা জানান, এপ্রিলের মধ্যেই ভারতকে ১ কোটি ৭০ লাখ টনের বেশি গম মজুদ রাখতে হবে। তবে এর পুরোটাই রফতানির জন্য নয়; বরং আগামী মৌসুমে এ মজুদ দেশটির সরকারকে রফতানি ও স্থানীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।

কারাভায়েস্তেভ বলেন, যেসব দেশ ইউক্রেনের পরিবর্তে ভারতীয় গম আমদানির প্রতি ঝুঁকছে, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ। তবে যেসব এশিয়ান দেশ সাধারণত ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে তারা খুব স্বল্প ব্যয়ে ভারত থেকে গম আমদানি করতে পারবে—এমনটা ভাবারও কারণ নেই। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন ব্যয় ও প্রতিযোগিতার বাজারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

পড়তে পারেন: ভারতের বাজারে বেড়েছে গমের দাম, বাড়ছে বাংলাদেশেও

এ বিশ্লেষক আরো বলেন, ভারতের গমের গুণগত মান আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এমনকি দেশটিতে উৎপাদিত কিছু গমের জাত পিত্জার ডো ও পাস্তা তৈরি জন্যও বেশি উপযোগী। আসন্ন মৌসুমে দেশটি কী পরিমাণ গম রফতানি করবে তা দেশটির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ওপর নির্ভর করছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রদেশের বন্দর দিয়ে জাহাজীকরণ সক্ষমতা ও রফতানি ব্যয় বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।

এর বাইরে অন্যান্য আমদানিকারক দেশ শস্যটির সরবরাহ নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গম আমদানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি ও ফ্রান্সে এখনো রফতানির জন্য পর্যাপ্ত গমের মজুদ রয়েছে। রোমানিয়াও সরবরাহ ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ