অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি বেড়েছে। তবে ভারতের বাজারে গমের দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশেরও বাড়ছে। পণ্যটির চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রমজানে ফ্লাওয়ার মিলগুলো বেশি গম কেনে। তাই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি গমের দাম ৪-৫ টাকা করে বেড়েছে।  আমদানিকারকরা বলছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কারণে দেশের বাজারেও গমের দাম বেড়েছে।

স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এক হাজার ২৮৪টি ট্রাকে ৫৩ হাজার ৪৪ টন গম আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার ১৪৮টি ট্রাকে ৩৯ হাজার ৪৩২ টন গম এসেছে। চলতি মার্চ মাসে আমদানির পরিমাণ আরও বেড়েছে।

পড়তে পারেন: চাল-গম আমদানি বাড়ছে, ভারতের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে বাংলাদেশ

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে দেশে উৎপাদিত গম দিয়ে চাহিদা না মেটায় বেশ কয়েক বছর ধরে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি হচ্ছিল। তবে গমের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ও গম রফতানি নিরুৎসাহিত করতে গম রফতানিতে শুল্ক আরোপ করায় ওই দেশ থেকে গম আমদানি কমে গিয়েছিল।

একইভাবে অন্যান্য দেশ থেকেও গম আমদানি অব্যাহত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি বন্ধ রয়েছে। তেমনি ওই পথ দিয়ে অন্যকোনও দেশ থেকেও পানিপথে জাহাজে করে গম আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে গম আমদানি শুরু করেছেন ব্যাবসায়ীরা।

পড়তে পারেন: চলতি বছরে ৭৩ লাখ টন গম আমদানি করবে ব্রাজিল

বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে গত ডিসেম্বর মাসে গমের আমদানি কমতির দিকে ছিল। তবে বর্তমানে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ ট্রাক করে গম আসছে। বাড়তি গম আমদানির ফলে সরকারের রাজস্ব যেমন বেড়েছে তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয়ও বেড়েছে। আমদানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ করে বন্দর থেকে দ্রুত গম খালাস করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে দেশে বাড়তি গমের চাহিদাকে পুঁজি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে হঠাৎ করে গমের দাম বাড়াই গম কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন পাইকাররা।

হিলি স্থলবন্দরে গম কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে গমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া গম কিনে ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে সরবরাহ করে থাকি। এর ওপর রমজানকে ঘিরে ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে সেই চাহিদা আরও বেড়েছে। কিন্তু একসপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে গেছে। যে গম ২৭-২৮ টাকা কেজি দরে কিনেিছি, তা এখন ৩২-৩৩ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে।

আমদানিকারক হায়াৎ মোহাম্মদ শেরেগুল বলেন, রমজানকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে গমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় হিলি বন্দর দিয়ে গমের আমদানি বেড়েছে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে গম আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে দেশের বাজারে গমের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে গমের আমদানি অনেকে বেড়েছে।

পড়তে পারেন: বাজারে গমের দাম ১৪ বছরে সর্বোচ্চ

আন্তর্জাতিক বাজারে গমের কিছুটা মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ও দেশে গমের বাড়তি চাহিদা থাকায় ভারতীয় রফতানিকারকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে ভারত থেকে প্রতিটন ৩০৫ থেকে ৩১০ মার্কিন ডলার আমদানি করতাম। এখন সেই গম কিনতে ৩৩৯ থেকে ৩৪৫ ডলার গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বাড়তি দামে গম আমদানির ফলে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে দেশের গম বাজারে এলে সরবরাহ বাড়বে, দামও কমে আসবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ