অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশ দুটি থেকে গম আমদানি প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গম আমদানিতে ভারতের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শুরুর ৩ মাসে ১২ লাখ ৩১ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে।

প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০–২১ অর্থবছরের ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি তিন মাসে গম আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টন। এই গমের ৩৩ শতাংশ বা ছয় লাখ টন এসেছে রাশিয়া থেকে। এর বাইরে ভারত থেকে ২৯ শতাংশ ও কানাডা থেকে ১৪ শতাংশ আমদানি হয়। আর চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের একই সময়ে গম আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ টন। এই গমের ১২ লাখ ৩১ হাজার টন বা ৭২ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে।

পড়তে পারেন: ভারতের বাজারে বেড়েছে গমের দাম, বাড়ছে বাংলাদেশেও

তবে যুদ্ধের অনিশ্চয়তার কারণে দেশে গমের মজুত বাড়ানোর কথা বলেছেন ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, যুদ্ধ কত দিন চলে, তা এখন বলা যাচ্ছে না। অবশ্য যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। এ জন্য যুগপৎ সরকারি ও বেসরকারিভাবে দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গমের মজুত বাড়ানো দরকার।

ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের আগেই দেশ দুটিতে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়ছিল। একই সঙ্গে জাহাজভাড়াও বাড়ছিল। সে জন্য তাঁরা ভারতকে বিকল্প উৎস হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেন। প্রতিবেশী দেশটি থেকে প্রায় একই মানের তুলনামূলক কম খরচে ও কম সময়ে আমদানি করা যায়।

পড়তে পারেন: বাজারে গমের দাম ১৪ বছরে সর্বোচ্চ

দেশের ব্যবসায়ীরা গম আমদানির জন্য ভারতের দিকে কতটুকু ঝুঁকেছেন, তা গত তিন মাসের উদাহরণেই বুঝা যায়। যেমন রাশিয়া–ইউক্রেন থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি হয় ৫ লাখ ৭২ হাজার টন বা ১৭ শতাংশ গম।

ভারত থেকে মূলত স্থলবন্দর দিয়েই গম আমদানি হচ্ছে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় ভারতের গম রপ্তানি বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশটিতে উৎপাদিত গমের শীর্ষ গন্তব্যস্থল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল–জুন তিন মাসে তারা বাংলাদেশে ৩৪ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে।

খাদ্যশস্য আমদানিতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, তুলনামূলক দর বিবেচনা করে ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন। রাশিয়া–ইউক্রেন থেকে সরে এসে ভারতের দিকে আমদানিতে ঝুঁকে পড়ার কারণ এটিই। ভারতের পাশাপাশি আর্জেন্টিনা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আগের তুলনায় গম আমদানি বেড়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চীন ও মিসরের মতো দেশগুলো নিজেদের খাদ্যপণ্যের মজুত গড়ে তুলছে। বাংলাদেশকেও এখন গমের মজুত বাড়াতে বেসরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি সরকারিভাবেও আমদানি বাড়ানো উচিত।

পড়তে পারেন: ভুট্টা ও গমের দাম বাড়ায় পশুখাদ্যে বাড়ছে ভাঙ্গা চাল

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০–২১ বিপণনবর্ষে বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৮ শতাংশ করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই বছরে বাংলাদেশের মোট গম আমদানির ৪১ শতাংশ হয়েছে এই দুই দেশ থেকে।

আমদানি তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে গম আমদানিতে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ২৭ টাকা। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় এখন ভারত থেকে আমদানিতে প্রতি কেজি দাম পড়ছে ৩১–৩২ টাকা। আবার একই মানের গম বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিতে খরচ পড়ছে ৩৬ টাকার মতো। অবশ্য বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমানের প্রোটিনযুক্ত গম আমদানিতে প্রতি কেজির খরচ পড়বে ৪৬ টাকা।

চালের পরই দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য হলো গম। চালের একমাত্র ব্যবহার ভাত ও পিঠা তৈরিতে। আর ভাতের বাইরে মানুষ যত খাবার খায়, তার সিংহভাগই তৈরি হয় গম, মানে আটা থেকে। গমের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় রুটি, পরোটা ও বিস্কুট তৈরিতে। আর সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে অভিজাত—সবখানেই গমের তৈরি খাবার মেলে। গম দিয়ে তৈরি বিস্কুটসহ নানা খাদ্যপণ্য রপ্তানিও হয়। রোজায় গমের চাহিদা কম থাকলেও, বছরজুড়ে কিন্তু ভালোই চাহিদা থাকে এই খাদ্যপণ্যের।

পড়তে পারেন: চাল-গম আমদানি বাড়ছে, ভারতের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে বাংলাদেশ

দেশে বছরে গম উৎপাদন হয় ১০–১২ লাখ টন। এর বাইরে বছরে কমবেশি ৭০ লাখ টন গম আমদানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গম আমদানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ প্রায় ৭৫ লাখ টন গম আমদানি করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারত থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আপাতত দেশে গমের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় গমের মজুত বাড়ানো উচিত। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানো দরকার। কারণ, রাশিয়া–ইউক্রেন গমের অন্যতম উৎস। অন্যান্য দেশও এখন বিকল্প উৎস থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করছে। তাতে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সূত্র: প্রথম আলো

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ