অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনায় লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতিতে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ভিয়েতনাম ঝুঁকছে চাল আমদানিতে। প্রায় তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে চাল আমদানি করছে দেশটি।

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি কমিয়ে আনতেই চাল আমদানিতে ঝুঁকছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়া টুডে ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

গত বছরের শুরু দিকে লকডাউন ঘোষণার পর টানা এক মাস চাল রফতানি বন্ধ রেখেছিল দেশটি। পরবর্তীতে রফতানি প্রক্রিয়া চালু হলেও তাতে কোটা বেঁধে দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে চালের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চেয়েছিল ভিয়েতনাম সরকার। মহামারীর কালে কমিয়ে আনতে চেয়েছিল খাদ্য সংকটের ঝুঁকি। এমনকি জনগণের চালপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দেশটিতে চালু করা হয় চালের এটিএম।

বৈশ্বিক চাল রফতানিকারকদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। এই তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান তৃতীয়। করোনাকালীন সময়ে ভিয়েতনামের রফতানিমুখী চালের বাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশটির বাজারে রফতানিযোগ্য প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫০৫ ডলারে। গত ৯ বছরের মধ্যে এটাই ভিয়েতনামিজ চালের সর্বোচ্চ দাম।

আরোও পড়ুন: ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে আরও আড়াই লাখ টন চাল আমদানি

অন্যদিকে ভারতের বাজারে রফতানিমুখী চালের দাম রয়েছে তুলনামূলক কম। বর্তমানে ভারতের বাজারে রফতানিযোগ্য ৫ শতাংশ ভাঙা চাল টনপ্রতি ৩৮১-৩৮৭ ডলারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, ভারতীয় চালের তুলনায় ভিয়েতনামের বাজারে খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়তি রয়েছে টনপ্রতি ১১৫ ডলারের বেশি।

এ পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামিজ ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আমদানিকে লাভজনক বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, আমদানি করে খাদ্যপণ্যটির বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তা না হলে ভিয়েতনামের বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা যাবে না।

মূলত এ কারণে এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে ভিয়েতনাম। ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) চুক্তির আওতায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ভারত থেকে ভিয়েতনামে ৭০ হাজার টন চাল যাবে। প্রতি টন চালের রফতানিমূল্য ধরা হয়েছে ৩১০ ডলার। অর্থাৎ, নিজেদের বাজারে এখনকার দামের তুলনায় টনপ্রতি প্রায় ২০০ ডলার কমে চাল আমদানি করছে ভিয়েতনাম।

আরোও পড়ুন: যে কারণে বাড়ছে চালের দাম, সরষে ফুলেই ভূত

এ বিষয়ে ভারতের রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি.ভি. কৃষ্ণ রাও বলেন, প্রায় তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম আমরা ভিয়েতনামে চাল রফতানি করছি। এশিয়ার অন্য রফতানিকারক দেশগুলোর তুলনায় বর্তমানে ভারতের বাজারে চালের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। এ সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছে ভিয়েতনাম। দেশটির ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, কম দামে আমদানি করতে পারলে অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যটির দাম কমে আসবে।

তবে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের প্রত্যাশা, ভারতের বাজারেও চালের দাম বাড়বে। করোনা মহামারীর মধ্যেও আফ্রিকার দেশগুলোয় ভারতীয় চালের রফতানি চাহিদা আগে থেকেই বাড়তি ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ চাল কেনার চুক্তি করেছে। ৩ বছর পর ভারতীয় চাল রফতানিকারকদের জন্য বাংলাদেশের বাজার খুলে গেছে। এখন ভিয়েতনাম ভারত থেকে চাল আমদানি করছে। সব মিলিয়ে ভারতীয় চাল রফতানিকারকরা ভালো সময় পার করছেন। রফতানি চাহিদা এমন চাঙ্গা থাকলে ভারতেও বাড়তে পারে চালের দাম।