ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্যবসা হলো সবচেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। প্রত্যেক নবীই কোনো না কোনো ব্যবসা করেছেন। আদিপিতা আদম (আ.) কৃষিকাজ করতেন। ইদরিস (আ.) সেলাইয়ের কাজ করতেন। দাউদ (আ.) লোহার বর্ম বানিয়ে বিক্রি করতেন। আমাদের নবীজি (সা.)-ও নিজে ব্যবসা করেছেন। তার দুবারের ব্যবসায়িক সফর সিরাতের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

হালাল রিজিক উপার্জন করা ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ফরজ ইবাদতগুলোর (নামাজ, রোজা, জাকাত ইত্যাদি) পরে হালাল উপার্জনও একটি ফরজ এবং ইবাদতের গুরুত্ব রাখে।’ অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মানুষ এর চেয়ে উত্তম উপার্জন-খাবার গ্রহণ করে না, যা সে নিজ হাতে উপার্জন করে খায়। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.)-ও নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।’ (সহিহ বোখারি)

আরও পড়ুন: ইসলামে ঝিনুকের চুন খাওয়া কি জায়েজ?

রিজিকের উত্তম মাধ্যম: রিজিক অনুসন্ধানের জন্য হুকুম করেছেন মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.)। ব্যবসাকে উপার্জনের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম আখ্যা দেওয়ার বড় কারণ এটাই যে, নবীজি (সা.) স্বয়ং ব্যবসা করেছেন। তিনি অন্য আরেকজনের সঙ্গে মিলে শেয়ারে বড় পরিসরে ব্যবসা করেছেন। মোদারাবা তথা ব্যবসায়িক পণ্য আদান-প্রদান করে লাভ নির্দিষ্ট হারে বণ্টন করে নেওয়া এ ধরনের ব্যবসাও করেছেন।

নবুওয়াত লাভ করার পূর্বে নবীজি (সা.) মোদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েব (রা.)-এর সঙ্গে শেয়ারে ব্যবসা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সায়েবে (রা.) বলেন, আমি জাহেলিয়াতের যুগে নবীজির ব্যবসায় শেয়ার করেছিলাম। আমি যখন মদিনায় গেলাম তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমাকে চেন? বললাম, কেন চিনব না? আপনি তো আমার অনেক ভালো ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। আপনি কোনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করতেন না, কোনো কিছুতে অভিযোগ করতেন না!’ (খাসায়েসে কুবরা, উসদুল গাবাহ)

উপার্জনের অনেক রকম পদ্ধতি আছে। বৈধ পন্থায় রিজিক অনুসন্ধান করাকে মহান আল্লাহ উত্তম বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ১০)।

ব্যবসা-বাণিজ্যের ফজিলত: সৎ ব্যবসায়ীর মর্যাদা বর্ণনা করে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যক্তি কিয়ামতের দিনে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের দলে থাকবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

রুটি-রুজির ব্যবস্থা করা মানুষের ওপর ফরজ। হালাল রিজিক উপার্জন ইমানের অংশ। জীবনযাপনে সংকীর্ণতা মান-সম্মানের জন্য কলঙ্ক। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজিক অনুসন্ধানে অবহেলা কাম্য নয়। রিজিকের ১০টি অংশ। এরমধ্যে ৯টি অংশ ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পেশাদার মুসলমানকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন।’

নবী করিম (সা.) আমর ইবনুল আস (রা.)-কে বলেছেন, আমি চাই তোমার উপযুক্ত ধনসম্পদ অর্জন হোক। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধনসম্পদের জন্য মুসলমান হইনি। আমি আমার হৃদয়ের টানে মুসলমান হয়েছি। নবীজি (সা.) বললেন, হালাল ধন-সম্পদ অনেক উত্তম জিনিস।’ (মুসনাদে আহমদ)

প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন নয়। বরং এর দ্বারা মানুষের সঙ্গে সখ্য ও হৃদ্যতার সম্পর্ক তৈরিও কাম্য। ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় সবার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও আন্তরিকতার প্রকাশ জরুরি। যাতে অন্যের অন্তরেও আপনার প্রতি ভালোবাসা স্থান করে নেয়। এবং এতে ইসলামের সৌন্দর্য অন্যদের কাছে তুলে ধরা সহজ হবে। আর ইমানদারির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মধ্যে আল্লাহপাক অগণিত রিজিক দানের ওয়াদা করেছেন।

হালাল রিজিক উপার্জনের জন্য যে পন্থাই অবলম্বন করা হোক, মহান রাব্বুল আলামিন এটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য কষ্ট করে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় আছে। আর যে ব্যক্তি নিজের বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের জন্য কষ্ট করে এবং মানুষের কাছে যাতে হাত পাততে না হয় এবং সেজন্য হালাল উপার্জন করে; সেও আল্লাহর রাস্তায় আছে।’ (তাবরানি ও আত-তারগিব ওয়াত তারহিব)।

ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকা: ব্যবসা, কারিগরি এবং পেশা অবলম্বনের অনেক ফজিলত। কিন্তু এসব ফজিলত তাদের জন্য যারা ইসলামি নীতিমালা ও নবীজির (সা.)-এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী সব কিছু করবে। ধোঁকাবাজি, প্রতারণা ও অন্যায়ের আশ্রয় নেওয়া কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না।

ইসলামে মিথ্যা বলা ও ধোঁকা দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রকৃতপক্ষে ধোঁকাদাতা খোদ নিজেকেই ধোঁকা দেয়। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ধোঁকা দেয় ও প্রতারণা করে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম)।

আরও পড়ুন:ইসলামে কসম কি জায়েজ?

আখেরাতের জন্য সম্পদ: আখেরাতের জীবন সুন্দর হওয়ার জন্যও ধনসম্পদ থাকা জরুরি। যাতে আল্লাহর সৃষ্টিজীব এবং নিজের অধীনদের ওপর মন খুলে খরচ করা যায়। বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ মানুষ অকর্মন্য। অথচ সবার উচিত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য সবক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়া। আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে আসা। কারণ, এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। তাদের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আসে। এটি অনেক বড় সওয়াবের কাজ।

পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যা নয়: মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যারা মিথ্যাবাদী তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পত।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৬১)

হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ব্যবসায়ী গোনাহগার এবং অসভ্য। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ব্যবসা-বাণিজ্যকে কী আল্লাহ হালাল করেননি? নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পূর্ণ বৈধ। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী মিথ্যা কসম করে। নিজের পণ্যের ব্যাপারে অসত্য বিবরণ দেয়। এভাবে অধিকাংশ মানুষ গুনাহগার হয়ে যায়। আল্লাহর রক্ষা করুন! আল্লাহ রক্ষা করুন! (মুসনাদে আহমদ)

আজকাল ব্যবসা-বাণিজ্যে আমরা অনেক পিছিয়ে। যারা ব্যবসা করছেন তাদের অনেকে ইসলামের নির্দেশনা। ব্যবসায়িক মূলনীতি পর্যন্ত জানেন না। জানলেও অনেকে আমলে নেন না। সবার উচিত ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত ধর্মীয় নির্দেশনা অধ্যয়ন করা। এতে অনেক বিষয়ের খোলাসা হওয়ার পাশাপাশি বিপুল সাফল্যও ধরা দেবে ইনশাল্লাহ।

ব্যবসা একটি নেক আমল শিরোনামে লেখাটির তথ্য দেশ রুপান্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি