নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গত ১৫ দিন সারাদেশে ডিম মুরগির আলোচনা শীর্ষে ছিল। বর্তমানে তা নেতিয়ে পড়লেও খামারিদের কষ্ট দূর হয়নি। পাইকারিতে খামারিরা কমদামে পোল্ট্রি পণ্য বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে আগুন। খামারিরা বলছেন, লোকসান না হলেও লাভের টাকা দেখতে পাচ্ছেন না তারা। কারণ খামারে দাম না থাকলেও বাজারে ১৭০ হিসেবে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

লাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একজন খামারির ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ পড়ছে ১৪৫ টাকা। কিছুদিন আগে ১৫০ টাকা কেজি হিসেবে খামারে পাইকারিতে বিক্রি করতে পেরেছেন খামারিরা কিন্তু বর্তমানে সেই দাম পাচ্ছেন না তারা। পারিশ্রমিকের হিসেব বাদ দিয়ে লাভ করতে না পারলেও কোনমতে টিকে আছেন তারা।

পড়তে পারেন: ১ হাজার লেয়ার মুরগি পালন ও ডিমের লাভ-খরচের হিসাব

খামারিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খামারে দাম নাই কিন্তু বাজারে ঠিকই আছে। কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কম হয় কিভাবে? দালালদের কারণে খামারিরা সামনে এগুতে পারছে না। সিন্ডিকেটের কারণে তাদের নিজের পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা এলাকার পোল্ট্রি খামারি সোহেল রানা বলেন, আগে প্রতিপিস ডিম উৎপাদনে খরচ হতো ৭ টাকা। আর বিক্রি হতো ৭ টাকা ৯০ পয়সা কিংবা ৮ টাকায়। এখন একই ডিম উৎপাদনে খরচ পড়ছে সাড়ে ৯ টাকার উপরে। আবার এককেজি ব্রয়লার উৎপাদনে ১৩০ টাকার উপরে খরচ করে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩০ টাকায়। জুতোজোড়া ছাড়া খামারিদের কপালে আর কিছু নাই।

পড়তে পারেন: চাকরি ছেড়ে লেয়ার মুরগিতে বাজিমাত ইরাক ফেরত ফারুকের

সাহেব বাজারের ডিম বিক্রেতা রহিম উদ্দীন বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। সাতদিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ২৯০ টাকা কেজি। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। খামার থেকে ১৩০ নাকি কত দামে কিনে তা আমরা আমি জানিনা। আমরা দালালের কাছে থেকে মুরগি কিনি।

একই বাজারের মুরগি বিক্রেতা ফারুক বলেন, বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে মুরগির দাম বাড়ছে-কমছে। শুধু মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০০ টাকার ব্রয়লার এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ২০ টাকা।

এদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। তবে, পেঁয়াজের দাম কমেছে। রাজশাহীর সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সবজির দাম কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের পর কিছু কিছু সবজির দাম বাড়ে। গাঁজর, শশা, লেবু, পেঁয়াজের দাম চাহিদার কারণে কমবেশি হয়। এছাড়া পটল, বেগুন, কাঁকরোল, ঢেঁড়স, করলাসহ প্রায় সব সবজিই বাজারে আছে; দামও সহনীয়। সবগুলো সবজির কেজিতে কমেছে ৫ থেকে ৭ টাকা।

পড়তে পারেন: ডিমের দাম নিয়ে কারসাজি, শীঘ্রই ব্যবস্থা

বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ৮০ টাকা। গত সপ্তাহ এই দাম ছিল ১২০ টাকার বেশি। এদিকে সপ্তাহের বাজারে বেগুন ৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, শসা ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৫-৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২৫-২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঝিংগা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পটল ৩৫-৪০ টাকা, লাউ পিচ ৪০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে সবজি বিক্রি কমে গেছে। যত বিক্রি হবে তত লাভ হবে আমাদের। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই বাজারে ভিড় শুরু করছে। মাছের দাম বেড়েছে তাই সবজির দামও কিছুটা বাড়তি ছিল আবার কমে গেছে। বৃষ্টি হলে উৎপাদন বাড়ে। কৃষকরা সরাসরি বাজারে নিয়ে আসছেন আশেপাশের এলাকা থেকে। কাশিয়াডাঙ্গা, হড়গ্রাম, পারিলা, বনগ্রাম এসব এলাকার সবজি বেশি।

নিউমার্কেট বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা হামিদুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম বেশি। ১৫ টাকা কেজি পটোল। বেগুন, কাঁচা পেঁেপ সবকিছুর দাম বেশি। সবজির বাজার বেশি থাকার কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সার-ঔষুধের দাম বেড়েছে তাই সবজির দামও বেশি। যতখানি কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়ে তার তিনগুণ বাড়ে ভোক্তার কাছে এসে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ