ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ এবং পরিবহন বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় সামান্য পোনা পাচ্ছে এখানকার চাষিরা। ভরা মৌসুমে ঘের তৈরি করেও চাষিরা পোনা ছাড়তে পারছেন না। করোনার বিরূপ প্রভাবে বর্তমানে হ্যাচারির পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে রেণু পোনা সঙ্কটে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত।

চিতলমারী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩০টি। যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭৫৮টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৮৭২টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির এবং ৬ হাজার ৯০০ টি পুকুরে বিভিন্ন মাছের চাষ হয়। এ এলাকায় চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমাণ সাদা মাছ উৎপাদন করেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত।

উপজেলার কুরমনি গ্রামের চিংড়ি চাষি বলরাম বিশ্বাস ও সুরশাইল গ্রামের মুন্না শেখ জানান, এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা চৈত্র মাসের শুরুতে পানি সেচ দিয়ে পুরনো মাছ ধরেন এবং ঘের শুকিয়ে ফেলেন। এরপর নানা রকম পরিচর্যার পর নতুন করে পানি দিয়ে বৈশাখ মাসের শুরু থেকে তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে শুরু করেন। সেই হিসেবে এখন চলছে ঘেরে রেণু পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম।

বিগত বছরগুলোতে এভাবে চলে এলেও মহামারী করোনার প্রভাবে এ বছর চিংড়ি রেণু পোনার সঙ্কটে চাষিরা মহাবিপাকে পড়েছেন। রেণু পোনা যা পাওয়া যাচ্ছে তাও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এখানে প্রতি হাজার গলদা দুই হাজার ৩০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে এবং বাগদা প্রতি হাজার এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় হাজার প্রতি ৫০০-৬০০ টাকা বেশি।

এ ব্যাপারে শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও পাটরপাড়ার ইউনুস বিশ্বাস জানান, তারা ঘেরে চিংড়ির রেণু পোনা ছাড়তে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ বছরও সময় মতো ঘেরে রেণু পোনা ছাড়তে না পারলে এ অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই সাথে বেকার হয়ে পড়বে কয়েক হাজার মানুষ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন রেণু পোনা সরবরাহকারী জানান, নদী থেকে পোনা আনার সময় তাদের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আড়তে পৌঁছতে হয়। এ সময় ঘাটে-ঘাটে, রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। অনেক সময় চাঁদা না দিলে মাছ রাস্তায় ফেলে দেয়। তাই মাছের দাম বেশি পড়ে। অনেকে আবার ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে চায় না।

চিংড়ি রেণু পোনা আড়ৎদার শেখ মতিয়ার রহমান ও পংকজ বিশ্বাস জানান, করোনার কারণে বর্তমানে হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। নদী থেকে আহরণকৃত মাছ সামান্য বাজারে উঠলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এভাবে চলতে থাকলে এ শিল্প বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো: জিল্লুর রহমান রিগান জানান, করোনার কারণে মৎস্য খাত ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিছু হ্যাচারি গলদা রেণু পোনা উৎপাদন করলেও তা পরিবহনের জন্য সমস্যা হচ্ছে। তিনি যেকোনো সমস্যায় তার ০১৭১৪-৯৩৯৩০৩ মোবাইল ফোনে চাষিদের যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন।

আরোও পড়ুন:মাছ দেখে পুকুরের সমস্যা নির্ণয়ের কৌশল ও সমাধান