নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভরা মৌসুমে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ডালভাতে পরিণত হয়েছে। তবে সেই হানা পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রেও পড়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। রোপন মৌসুমে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ বীজ আমদানির সংবাদে অবিক্রিত থেকে যায় দেশীয় জাতের বীজ। পরে পুরাতন বীজের অঙ্কুরোদদগম হয়নি চাষিদের। ফলে ভারতীয় জাতের কারণে ধরা খেয়েছেন দেশের বৃহৎ ফরিদপুর অঞ্চলের পেঁয়াজচাষিরা।

কৃষকরা বলছেন, মানসম্পন্ন পেঁয়াজ বীজের অভাব রয়েছে। অনেক স্থানীয় কৃষক তাদের ক্ষেতে পুনরায় পেঁয়াজ বীজ বপন করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে দ্বিতীয়বার পেঁয়াজ চাষ করায় চাষের সময় এবং খরচ উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফদিপুরে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ভারতীয় পেঁয়াজের জাত আসার কারণে কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। স্থানীয় বীজ উৎপাদনকারীরা অভিযোগ করেন, ভারতীয় পেঁয়াজ ও বীজ আমদানির কারণে দেশীয় পেঁয়াজের দাম কমে যাচ্ছে। যদি দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ভালো দাম চাষিরা না পান তাহলে পরবর্তীতে আমদানি নির্ভর হতে হবে। ফলে চাষিদের কোনঠাসা করা হবে পরিকল্পিতভাবে।

এছাড়া তারা বলছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা জাতের কারণে গত বছর উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজের একটি বিশাল মজুদ অবিক্রিত থেকে যায়। পরে পুরাতন বীজের চারা জন্মায়নি অনেক জমিতে। কৃষকরা একই জমিতে দুবার পেঁয়াজ রোপন করতে বাধ্য হয়েছেন। এতকিছু ভোগান্তির কারণ ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ আসা। এমনকি ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ রোপন করা অনেক কৃষকের জমিতে চারা গজায়নি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

নাসিক রেড এন-৫৩ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সফল কৃষকরা

বাজারে উঠেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, দামে হতাশ চাষিরা

৫ বছরের সর্বনিন্মে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম

পচন রোধে মাঠেই শুকিয়ে নিন পেঁয়াজ

কীভাবে ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ এত গভীরভাবে বাজারে প্রবেশ করতে পারে সে সম্পর্কে কৃষকরা আগেই প্রশ্ন তুলেছিল। ভরা মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পেঁয়াজ দেশের বাজারে কেন আমদানি করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয় চাষিদের।

সূত্র বলছে, ধরুন ১০ কেজি পেঁয়াজের বীজ আমদানি করা হলো যা একটি সরকারী চ্যানেলের মাধ্যমে আসে। সরকারিভাবে দেশে পেঁয়াজ বীজ আমদানি হলে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু সরকারের কিছু দুষ্টচক্র পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে। লাভের আশায় কৃষকরা বুক বাঁধলেও কাজে আসছে না শেষ পর্যন্ত।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে মোট ২৫৮ টন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদিত হয়েছিল। প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা জাতের পছন্দের কারণে গত বছর উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজের বিশাল মজুদ অবিক্রিত থেকে যায়।

সালথা উপজেলার খোয়ারগ্রাম গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মোঃ মফিকুল ইসলাম জানান, পাইকারের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকায় দুই কেজি পেঁয়াজের বীজ কিনে চাষ করেছেন তিনি। তাতে অতিরিক্ত ৬ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু জমিতে একটি চারাও ফুটেনি এবং এখন আমাকে নতুন বীজ কিনতে হচ্ছে তার।

একই গ্রামের আরেক কৃষক মোঃ নাজমুল ফকির জানান, তিনি ৬৫ হাজার টাকায় ৩৬ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের বীজ বপন করেছেন। এই বীজগুলো ভালোভাবে জন্মালে চার একর জমির জন্য পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু ভুল অঙ্কুরোদগমের কারণে মাত্র আড়াই একর জমিতে চাষ করার মতো মোটা পেঁয়াজ পাবেন। তাকে পরবর্তী রোপন মৌসুমে অতিরিক্ত খরজ করে পেঁয়াজ বীজ কিনতে হবে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার পেঁয়াজ বীজ চাষি বক্তার খান বলেন, গত বছর অবিরাম বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন পোকামাকড়ের আক্রমণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং, আমরা এই বছর ভালো দাম পাওয়ার আশা করেছিলাম কিন্তু ভারতীয় বীজ দেশের আসার কারণে আমাদের আগের স্টক বীজ বিক্রি করতে পারিনি। ফলে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

একই উপজেলার পূর্ব ভাসানচর গ্রামের আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষী মোঃ আবুল হাসান জানান, তিনি ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ শতক জমি থেকে ২০ কেজি ফসল পেয়েছেন। তিনি আগামী বছরে পেঁয়াজের বীজ চাষ করবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমার মতো আমাদের এলাকায় আরও কৃষক রয়েছে যারা পেঁয়াজ বীজ চাষ ছেড়ে দিচ্ছে।

একই এলাকার আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষী মোস্তফা বিশ্বাস বলেন, সরকার যদি তাদের বীজ বাইরের উৎস থেকে বা ভারত থেকে না কিনে তার মতো কৃষকদের কাছে থেকে কিনে তাহলে এই বর্তমান দুর্দশায় পড়তে হবে না।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জিয়াউল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, কৃষকরা নিন্ম মানের বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন এমন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ আসেনি। আমরা সবসময় কৃষকদেরকে বলি খোলা বা নিশ্চয়তাবিহীন পেঁয়াজের বীজ না কিনতে, কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেন না। অনেক আমদানিকারক আছেন বীজ আমদানি করেন। কিন্তু আমরা চাষিদের আমাদের নিজস্ব বিএডিসি বা স্থানীয় জাত চাষের জন্য বলি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ