ড. মো. আলাউদ্দিন খান ও  কৃষিবিদ মো. মুশফিকুর রহমান: গুণগতমান বজায় রেখে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য  পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে সঠিক মূল্যে বিক্রয় করা যায়। কৃষকরা সাধারণত পেঁয়াজ মাঠে শুকিয়ে নেন না। এতে করে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যায়। তাই পচন রোধে মাঠেই শুকিয়ে নিতে হবে এই মসলা ফসল।

পেঁয়াজ সংরক্ষণের আরেকটি উদ্দেশ্য বাজার স্থিতিশীল রাখা। এছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট বছরব্যাপী পেঁয়াজ সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

সাধারণত বাংলাদেশের কৃষকগণ পেঁয়াজের কিউরিং না করেই পেঁয়াজ স্টোরে সংরক্ষণ করে থাকেন। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মাঠ থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহের পর পাতাসহ ০৫-০৭ দিন হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে পেঁয়াজকে শুকাতে হয়।

পেঁয়াজ সংগ্রহের সময় আগাম বৃষ্টিতে পেঁয়াজ ভিজে গেলে দ্রুততার সাথে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হয়। প্রয়োজনে ফ্যানের বাতাসে শুকাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পেঁয়াজকে রোদে শুকালে ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুকানোর পর পেঁয়াজের ৪-৫% ওজন হ্রাস পায় যাতে পেঁয়াজ দৃঢ় ও আঁটসাঁটে হয় এবং পেঁয়াজের গলা সংকুচিত হয়ে ছত্রাক এবং ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

কিউরিং এর ফলে শ^সন হারও কমে যায়। অপর্যাপ্ত কিউরিং এর ফলে রোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিউরিং করার কারণে পাতা শুকিয়ে গাছের বৃদ্ধি বাধাদানকারী হরমোন পেঁয়াজে (কন্দ) প্রবেশ করে যাহা পেঁয়াজের সুপ্ততার মেয়াদ বৃদ্ধি করে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

সারাবছর পেঁয়াজ ভালো রাখার টেকনিক

পদ্মার চরে আগাম পেঁয়াজে বিল্পব

রাজশাহীর মাটিতে ফলেছে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ, দ্বিগুণ লাভের আশা

পেঁয়াজের সংরক্ষণক্ষমতা বৃদ্ধি ও গুণগতমান বজায় রাখার জন্যেই পেঁয়াজকে পাতাসহ শুকানো হয়। হালকা ছায়ায় শুকানোর কারণে পেঁয়াজের রং উজ্জ্বল হয়। পেঁয়াজ শুকানোর পর বাল্বের উপরের গলা ২.০-২.৫ সে. মি (সর্বোচ্চ ১ ইঞ্চি) রেখে পাতা কেটে দিতে হয়। পরে বাল্বের মূল কেটে পরিষ্কার করে পেঁয়াজ স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়।

উল্লেখ্য, রোগবালাই, থেঁতলানো, গলা মোটা, বোল্টার, পচা, ক্ষত ইত্যাদি মুক্ত একক দৃঢ় বাল্ব সংরক্ষণের জন্য বাছাই করা হয়। খুবই ছোট/বড় বাল্ব সংরক্ষণের জন্য একসাথে না রাখাই ভালো।

সংরক্ষণাগারে পেঁয়াজের পচন, অঙ্কুরোদগম ও ওজন হারোনোর পরিমাণ জাতভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। দৃঢ় ও আঁটসাঁটে, ঝাঁঝ বেশি, পানি কম, আকারে মধ্যম, গলা চিকন, উচ্চ  শুষ্ক পদার্থ সম্বলিত বৈশিষ্ট্যের জাতের সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি। যেমন- বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-৪। হাইব্রিড জাত অপেক্ষা স্থানীয় জাতের সংরক্ষণ ক্ষমতা ভাল।

যে পেঁয়াজের  শুষ্ক শল্কপত্রের পরিমাণ বেশি থাকে সে পেঁয়াজের সংরক্ষণকাল বেশি হয়। কিউরিং করলেই শুস্ক শল্কপত্রের পরিমাণ বাড়ে। হলুদ ও সাদা রংবিশিষ্ট জাতের পেঁয়াজের তুলনায় লাল রং বিশিষ্ট পেঁয়াজের ফিনোলিক এসিড,  এন্থোসায়ানিন, ফ্লাভোনয়েড (কুয়েরসিটিন, ক্যাম্পফেরল), পলিফেনল নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে।

বারি পেঁয়াজ-৪ জাতের পেঁয়াজে এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। তবে লাল রং এবং সাদা রং বিশিষ্ট পেঁয়াজের তুলনায় হালকা লাল রং বারি পেঁয়াজ-১ বিশিষ্ট পেঁয়াজে শ^সন হার কম হয়।

পচন রোধে মাঠেই শুকিয়ে নিন পেঁয়াজ লেখাটি লিখেছেন ড. মো. আলাউদ্দিন খান ও কৃষিবিদ মো. মুশফিকুর রহমান ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এ্রগ্রিকেয়ার/এমএইচ