ড. মো. আলাউদ্দিন খান ও  কৃষিবিদ মো. মুশফিকুর রহমান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে মসলাজাতীয় পণ্যের তালিকায় পেঁয়াজ অন্যতম। চাহিদার ভিত্তিতে (জনপ্রতি দৈনিক ৩৫ গ্রাম) মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ প্রথম স্থান অধিকার করে আছে। উৎপাদনের বিবেচনায়ও এ মসলা ফসলটি প্রথম স্থানে আছে।  কিন্তু পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য হওয়ায় সংরক্ষণ করতে ঝামেলা পোহাতে হয় কৃষকদের। তাই সারাবছর পেঁয়াজ ভালো রাখার টেকনিক জানা প্রয়োজন।

বিশ্বে সাধারণত ০৩টি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে যথা- কোল্ডস্টোরেজ (তাপমাত্রা ০-২/৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫-৭০%), অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজ/হিট স্টোরেজ (সাধারণ তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫-৭০%) এবং কন্ট্রোল্ড অ্যাটমোসফিয়ার স্টোরেজ (অক্সিজেন ১-২%, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ৩% ও তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)। নিম্ন তাপমাত্রা অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের জন্য কোল্ডস্টোরেজ উপযুক্ত পদ্ধতি।

বাংলাদেশের মতো গরম অঞ্চলের দেশেসমূহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করাই উপযুক্ত পদ্ধতি, যাকে অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজ (Ambient storage) বা হিট স্টোরেজ (Heat storage) বলে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

পদ্মার চরে আগাম পেঁয়াজে বিল্পব

ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে ভাটা, ফের কমলো দাম

ভ্যাপসা গরমে আলু-পেঁয়াজ ভালো রাখার উপায়

পেঁয়াজ সংরক্ষণে ডাচ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ

অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজে ২৫-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণকৃত পেঁয়াজে অংকুরোদগম/মূল উৎপাদনকারী হরমোন (সাইটোকাইনিন) উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের দেশে অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজ সাধারণত বাঁশের তৈরি হয়ে থাকে।

বাঁশ দ্বারা এক বা দুই স্তর বিশিষ্ট মাচা/চাং তৈরি করা হয়। পেঁয়াজের মাচা বাঁশের বানা দিয়ে তৈরি করা হয়। স্টোর ঘরের চাল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। খড়ের/অ্যাসবেসটস দ্বারা নির্মিত চাল থেকে টিন দ্বারা নির্মিত চালে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। সংরক্ষণাগারের চাল টিনের হলে টিনের নিচে অ্যালুমিনিয়াম ইনসুলেটর দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাছাড়া পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থার জন্য পেঁয়াজের মাচার চারিদিক থেকে ভেন্টিলেটারের ব্যবস্থা করতে হয়।

বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে অরিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে গুদামজাত রোগ বøাক মোল্ড/গ্রেমোল্ড এবং নরম পচা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে। টিন দ্বারা নির্মিত সংরক্ষণাগারে স্তুুপীকৃত পেঁয়াজের পুরুত্ব ৩০ সেমি. (১২ ইঞ্চি) এবং খড় বা অ্যাসবেসটস দ্বারা নির্মিত সংরক্ষণাগারে স্ত‚পীকৃত পেঁয়াজের পুরুত্ব ৩৭ সেমি. (১৫ ইঞ্চি) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা ভালো। দৈনন্দিন রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক বা বাঁশের তৈরি র‌্যাকে ১৫ সেমি. (৬ ইঞ্চি) পুরুত্বে সংরক্ষণ কর যায়।

এখানে উল্লেখ্য যে, অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও আর্দ্রতা ৬৫-৭০%। যা পেঁয়াজের গুণাগুণ, রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পায়। স্টোর থেকে ১৫-২০ দিন পর পর পেঁয়াজ নামিয়ে পচা, অংকুরোদগমকৃত এবং রোগাক্রান্ত বাল্ব আলাদা করে পুনরায় সংরক্ষণ করতে হয়।

এভাবে মাঝে মাঝে বাছাই না করলে পেঁয়াজের ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে পেঁয়াজের ওজনেরও হ্রাস পেতে থাকে। আবহাওয়াজনিত কারণে পেঁয়াজের সংরক্ষণ ক্ষমতা বছর থেকে বছরে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কৃষকপর্যায়ে ৪০০-৫০০ মন পেঁয়াজ সংরক্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিস্তর বিশিষ্ট একটি অ্যাম্বিয়েন্ট স্টোরেজ তৈরি করতে প্রায় ৩-৩.৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।

এ ধরনের স্টোর প্রায় ২০-৩০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। উৎপাদন থেকে সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত এ ভাবে ভালো কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পেঁয়াজের সংরক্ষণজনিত ক্ষতির পরিমাণ গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে রাখা সম্ভব।

ড. মো. আলাউদ্দিন খান ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর, ই-মেইল : [email protected] এবং কৃষিবিদ মো. মুশফিকুর রহমান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ