নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঝিনাইদহের শৈলকুপার পেঁয়াজের বিখ্যাত শৈলকুপা বাজারে শত শত পেঁয়াজ চাষি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধে বিক্ষোভ করেছেন। বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন তারা।

চাষিরা বলছেন, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানির কারণে চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। উঠছেনা উৎপাদন খরচ। গুনতে হচ্ছে লোকসান। তারা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি ‘ঢলতার’ নামে ওজনে বেশি নেওয়ার অভিযোগও তুলেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ঝিনাইদহ। চলতি মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার ৭৯১ হেক্টরে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। তার মধ্যে শৈলকুপা উপজেলাতে সাড়ে আট হাজার হেক্টরে পেঁয়াজ হয়েছে।

পড়তে পারেন: পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা নেই

চাষিরা জানান, চলতি মাসের শুরু থেকেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করে। প্রথম দিকে প্রতি মণ পেঁয়াজ এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। আমদানি বাড়ার পর দাম কমতে থাকে।

মঙ্গলবার শৈলকুপার হাটবার। ভোর হতেই চাষিরা ভ্যান, নসিমন বোঝায় করে পেঁয়াজ হাটে নিয়ে আসে। এদিন অন্তত ২০ হাজার মণ পেঁয়াজ আমদানি হয় বলে চাষিরা জানান।

সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাজার প্রত্যক্ষ করে দেখা যায়, হাটে পেঁয়াজ মণপ্রতি বিক্রি হয় ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা দরে। আড়তদারদের কাছে এই দাম শুনে চাষিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা বাজারে বিক্ষোভ শুরু করে।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু, কমেছে দাম

এ সময় আড়াতদার ও চাষিদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। অনেক আড়তের সামনে থাকা দাঁড়িপাল্লা খুলে ফেলতে দেখা যায়। কয়েকজন কয়েকটি আড়তে গিয়ে দরজায় লাঠি দিয়ে বাড়িও দেন। আড়তগুলোও পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে দেয়। অধিকাংশ চাষি পেঁয়াজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অল্প কিছু মানুষ বিক্রি করছে।

শৈলকুপার সাধুহাটি গ্রামের পেঁয়াজ চাষি রাজন হোসেন বলেন, তিনি এবার সাত বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। হাটে ১৫ মণ পেঁয়াজ এনেছেন। প্রতি মণ ৭০০ টাকা করে দাম করছে। এ দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে উৎপাদন খরচ উঠবে না।
পেঁয়াজের মৌসুমে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধ রাখার দাবি করেন এই চাষি।

তার পাশ থেকে আরেক চাষি অভিযোগ করে বলেন, একে তো দাম কম তারপরে ওজনে বেশি নেয়। ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও ব্যাপারী ঢলতার নামে মণ প্রতি চার থেকে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ বেশি নেয়। তাই অনেকে পেঁয়াজ বিক্রি না করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।

পড়তে পারেন: মেহেরপুরে ১২৫ কোটি টাকার পেঁয়াজবীজ উৎপাদন সম্ভাবনা

বাজারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চাষি বলেন, এখন এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। এ বছর ফসল মন্দা। বিঘায় হয়তো ৪০ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ পাচ্ছেন কৃষক। তাহলে মণপ্রতি কৃষকের উৎপাদন খরচই তো এক হাজার টাকা। তাহলে কীভাবে একজন কৃষক ৭০০ টাকা মণে পেঁয়াজ বিক্রি করবেন?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শৈলকুপা বাজারের আড়তদার সিরাজুল ইসলাম মাখন বলেন, এখন পেঁয়াজের মৌসুম আর ভারত থেকে আমদানি- এই দুই কারণেই বাজার পড়ে গেছে। আজ বাজারে চাষিরা বিক্ষোভ করেছেন। অনেক সময় বেচাকেনা বন্ধ ছিল। তারপর আবার শুরু হয়েছে।

এ দিকে শৈলকুপার বিভিন্ন মুদি দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। শৈলকুপা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজগর আলী গণমাধ্যমেকে বলেন, দাম কমে গেছে এটা সত্য। তবে আমরা তো শুধু উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত; বাজারজাতকরণ আমাদের হাতে নেই। ফলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে রেকর্ডসংখ্যক পেঁয়াজ আমদানি

এদিকে চাষিরা বিক্ষোভ করলেও বাজার স্থিতিশীল রাখতে রোজার ঈদ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার আমদানি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কৃষি সচিব মো. ছায়েদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকি। এখন পর্যন্ত কৃষক পেঁয়াজের ভাল দাম পাচ্ছে। অন্যদিকে সামনে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই সময়ে পেঁয়াজের দাম যাতে না বাড়ে, সেটিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। তাই, আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেই।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ