অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে রেকর্ডসংখ্যক পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। গতকাল একদিনেই সর্বোচ্চ ৭৭টি ট্রাকে ২ হাজার ১৭৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

একদিনেই বন্দর দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম আরো কমেছে। এছাড়া কয়েক দিন ধরে দাম কম থাকায় মানুষ শবেবরাতের জন্য আগে থেকেই পেঁয়াজ কিনে রাখছে। যার কারণে মোকামগুলোয় যেভাবে পেঁয়াজের চাহিদা থাকার কথা, সেভাবে নেই। অন্যদিকে বন্দর দিয়ে বাড়তি পেঁয়াজ আমদানির কারণে দাম কমতির দিকে। যে হারে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, তাতে রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

পড়তে পারেন: প্রতিকেজি পেঁয়াজে কমলো ১০ টাকা

বন্দরসংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি বাড়ায় পণ্যটির দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমেছে। একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ২০-২৬ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ১৮-২৩ টাকায় নেমেছে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি দিন দিন বাড়ছে। তবে এ-যাবত্কালের মধ্যে গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৭৭টি ট্রাকে ২ হাজার ১৭৬ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর, নাসিক, গুজরাট ও নগর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ একদিন আগে ২০ টাকা বিক্রি হলেও তা থেকে কমে ১৮ টাকায় নেমেছে। নাসিক, গুজরাট ও নগর জাতের পেঁয়াজ ২৬ থেকে কমে ২৩-২৪ টাকায় নেমেছে। একইভাবে খুচরা বাজারেও কমেছে দাম। ১৬-২০ টাকা দামের পেঁয়াজ ১৪-১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: ঘরোয়া উপায়ে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণ কৌশল

হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাকিল খান বলেন, বন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির ফলে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই দাম কমছে। এতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সি বলেন, টানা তিনদিন হিলিসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে। এ সময় বন্দরগুলো দিয়ে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি কোনো ধরনের পেঁয়াজ আমদানি হবে না। এ সময় দেশের বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও শবেবরাত উপলক্ষে দেশে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা।

এদিকে চলতি মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দিয়েছে সরকার। হিলিসহ দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়ার কারণে দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পেঁয়াজ আমদানির ফলস্বরুপ আসন্ন রমজানে পেঁয়াজের দাম বাড়বে না বলে বলছেন ব্যবসায়ীরা।

পড়তে পারেন: রসুন ৩০, পেঁয়াজের কেজি ২৪ টাকা

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, বাজারে দেশীয় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিতে ও কৃষকদের পেঁয়াজ চাষাবাদে উৎসাহিত করতে সরকার গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) বন্ধ করে দেয় সরকার।

এসময় বাজারে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমতির দিকে ছিল। যার কারণে দেশের বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজের চাহিদা তেমন না থাকায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি কমিয়ে দেন আমদানিকারকরা। তবে পূর্বের নেয়া অনুমতি পত্র দিয়ে ভারত থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। এরই মধ্যে মাঘের হঠাৎ বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবাদ করা পেঁয়াজের জমি নষ্ট হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে।

পূর্বের অনুমতি পত্র দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলে আসন্ন রমজানে দাম বাড়ার আশংকা নেই বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে সম্প্রতি নতুন করে পেঁয়াজের ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) দেয়া শুরু করেছে সরকার। কিন্তু মেয়াদ দিচ্ছে আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত। একই সঙ্গে পুরানো যেসব আইপি নেয়া ছিল সেগুলোরও মেয়াদ একই সময় নির্ধারন করে দিয়েছে সরকার। এতে করে নির্ধারিত তারিখের পরে কি হবে সেটি নিয়ে চিন্তায় আছেন বলে জানান তারা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ