ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ কৃষিমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে জনসংখ্যার মাথাপিছু ভোজ্য তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, মাটি ও আবহাওয়া উপযোগি নতুন নতুন তৈলবীজের জাত উদ্ভাবন করে ব্যাপকহারে আবাদ করে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।

একসময় ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষাই প্রধান ছিল। সরিষা শুধু তেলই নয় এ থেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খৈল পাওয়া যায়, যা আমাদের মৎস্য ও পশু খাদ্য হিসেবে বেশ চাহিদা রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরিষা/তেলবীজ চাষ সম্প্রসারণ ও ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে সভায় এসব কথা বলেন।

ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী জানান, তৈলবীজ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে তৈলবীজ চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর ধরনের সহায়তা করা হবে।

সভায় জানানো হয়,  দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। গত মৌসুমে প্রায় ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে তৈলবীজ ফসলের চাষ করে ৯ দশমিক ৭০ লাখ মে:টন ফসল উৎপন্ন হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় ৯-১০ শতাংশ।

দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়। দেশে মোট ভোজ্য তেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মে:টন।

আমাদের চাহিদার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মে:টন আমদানি করতে হয়, টাকায় মোট ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সুর্যমূখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে এর মধ্যে সরিষা ,তিল এবং র্সূযমুখী থেকেই সাধারণত তেল বাননো হয়। এখানে উৎপাদিত বাদাম দেশের মানুষ  ভেজে খায় ।

বর্তমানে দেশে আবাদী জমির মাত্র ৪ ভাগে তৈল ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। দেশে সামান্য পরিমান সয়াবিন উৎপন্ন হয় তা দিয়ে খৈল তৈরী করে হাস মুরগী ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় আমদানি করা সয়াবিন থেকেও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তেল তৈরী হয়। যা আমরা খাই।

সরিষায় বীজে ৪০-৪৪ ভাগ তেল ও ৪০ ভাগ আমিষ সমৃদ্ধ খৈল পাোয়া যায়।   বারি এ যাবত ৪৪টি ও বিনা ২৮ উচ্চফলনশীল তেল বীজ জাত উদ্ভাবন করেছে। ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেলের (রাইস ব্রান অয়েল) চাহিদা দেশে ক্রমেই বাড়ছে। নতুন ৬ টি প্রতিষ্ঠানও এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে।

গত বছরে তারা ১দশমিক ১৮লাখ মে:টন তেল উৎপাদন করে।দেশে ৫ কোটি টন ধান থেকে ৮ শতাংশ কুড়া এবং কুড়া থেকে ২০-২৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি মানুষ এখন এই তেলের দিকে ঝুঁকছেন।

তৈলবিজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে সরিষার আবাদি জমির পরিমান বৃদ্ধির জন্য উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করে দিতে হবে । এছাড়া কৃষকদের উন্নত বিজ সরবরাহ করা ,আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ও কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৈল বিজ তথা সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কে প্রধান করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন সদস্য এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সদস্য পরিচালক করে ৬সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) করার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত হয়।  ডিপিপির মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। এ কমিটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বল্প সময়ে আবাদযোগ্য ফসলের একটি শস্য পর্যায় (ক্রপিং প্যাটার্ন) তৈরি করবেন।

যেখানে তৈলজাতীয় ফসল বিশেষ করে সরিষা উৎপাদনের বিষয়টিকে বেশি জোর দেয়া হবে। ক্রপিং প্যাটার্নের ক্ষেত্রে কৃষকদের যেসব বীজ লাগবে তার সবটাই সরবরাহ করবে সরকার। এছাড়াও বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হবে।

আরও পড়ুন: এলাকা উপযোগী ফসল আবাদের আহ্বান ব্রাসেলস স্প্রাউট নতুন ফসল নতুন সম্ভাবনা

কৃষি সচিব মো: নাসিরুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সংস্থার প্রধানগণ ও কৃষি বিজ্ঞানী গবেষক ও কৃষিবিদগণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকেরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।