ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রান্তিক কৃষকদের যেন খাদ্য সংকটে পড়তে না হয় সেজন্য নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তৈরি পারিবারিক পুষ্টি বাগানে মিলছে ৩২০ পরিবারের চাহিদা।

করোনাকালীন সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় যেসব প্রান্তিক কৃষক এক শতক জমিতে শাক সবজি চাষ করেছেন তাদের বিনামূল্যে বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়।

আপদকালীন সময়ে দেশে সবজি উৎপাদনে কোন প্রভাব না পড়ে সেই লক্ষ্যে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বসত বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করেছেন উপজেলার কৃষকরা। এদিকে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসব বাগান। শুধু পুষ্টি নয়, সংসারে অর্থও জোগান দিচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার কয়েক শত কৃষক পরিবার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পুরো দেশ যখন লকডাউনে ছিল তখন সবজি সরবরাহ ও উৎপাদনসহ নানা বিষয়ে চরম সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়াও সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও বন্যায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। সেই সংকট যেন বৃহৎ আকার ধারন না করে সেই লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের ফেলে রাখা জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করছেন।

আরোও পড়ুন: করোনাকালেও ভালো দামে মরিচ চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিতে ৩২টি করে মোট ৩২০টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। এসব পারিবারিক পুষ্টি বাগানে উৎপাদিত নানা রকমের বিষমুক্ত সবজি কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারজাত করে বাড়তি অর্থও আয় করছেন। বাগানের পরিচর্যা ও পরামর্শের বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক আবু বক্কর, আব্দুস ছাত্তার ও ময়নুল ইসলাম বলেন, বসতবাড়ির পাশের জমি দীর্ঘদিন থেকে পতিত ছিল। কোন কাজে আসছিল না। উপজেলা কৃষি অফিসার আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখায়। তাঁর সহযোগিতায় আমরা নিজেদের ক্ষেতের সবজি খেতে পারছি।

তারা বলেন, বাগান তৈরির খরচ হিসেবে কৃষি অফিস থেকে এক হাজার ৯৩৫ টাকা ও ১৬ প্রকারের শাক সবজির বীজ পেয়েছি। বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে পারিবারিক চাহিদা মিটাতে পারছি। অন্যদিকে বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ আয় হচ্ছে।

মহাদেরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, পারিবারিক পুষ্টি বাগান কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি। এতে উপজেলার ৩২০টি কৃষক পরিবার উপকৃত হচ্ছে।

তিনি বলেন, সবজি ক্ষেত তৈরি, চারদিকে বেড়া দিয়ে পরিচর্যার জন্য প্রত্যেক কৃষককে দেওয়া হয় ১ হাজার ৯৩৫ টাকা। ওই জমিতে সবজি চাষের জন্য বিনামূল্যে লাউ, সিম, ঢ্যাঁড়শ, ডাঁটা, ধনিয়া, চিচিংগা, পুঁইশাক, কলমিশাক, লালশাক, পালংশাক, পেঁপে, মুলা, করলাসহ ১৬ ধরনের সবজি বীজ দিয়েছে কৃষি অফিস।

মহাদেবপুরে পুষ্টি বাগানে মিলছে ৩২০ পরিবারের চাহিদা। আগামীতে উপজেলার প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হবে পারিবারিক পুষ্টি বাগান এবং সেই লক্ষে উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।