ছবি: এগ্রিকেয়ার২৪.কম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা পরিস্থিতিতে মাছের দামে ধস নেমেছে। লোকসান গুনছেন মাছচাষিরা। সারাদেশের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর দুর্গাপুরের মাছচাষিরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। মাছের দামে উঠছেনা উৎপাদন খরচ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্য-চাষিরা।

পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষ করেন এখানকার চাষিরা। দফায় দফায় মাছে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। খরচের তুলনায় মাছের দাম নেই। এরইমধ্যে করোনার লকডাউনে মাছের বিক্রি কমে গেছে বলে জানান মাছচাষিরা।

জমি লিজ ও মাছের খাবার হিসাব করে লোকসানে পড়েছে শতকরা ৯০ ভাগ চাষী। দুর্গাপুর মৎস্য আড়ৎগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোর তুলনায় পাইকারী সকল মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। সাথে ‘ঢলন প্রথা’ থাকায় মাছের মন ৪৪ থেকে ৪৫ কেজিতে পড়ে। ফলে একদিকে নেই দাম, অন্যদিকে বাড়তি দেওয়ায় লোকসান গুনছেন তারা।

খুৃচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বাহিরে  মাছের বাজারে খারাপ প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি ঠিক হলে বাজার ঠিক হবে বলেও আশাবাদী । এছাড়া রাজশাহী সারাদেশে কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকায় এখানকার মাছ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। লাভের আশায় দেখাদেখি মাছচাষ লাভজনক হওয়ায় মাছ চাষে ঝুঁকেছেন তারা ।

এদিকে মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত দুই বছরে পুকুর বেড়েছে পাঁচ শতাধিক। যেখানে পূর্বে পুকুরের সংখ্যা ছিলো ২ হাজার  কিন্তু বর্তমানে আনুমানিক আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে পুকুরের সংখ্যা।

স্থানীয় পাইকারী বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলভার কার্প প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে পূর্বে দাম ছিল ১১০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। কাতল ১৬০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ২৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। রুই বর্তমানে ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা, আগে ছিল ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা। জাপানি ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা, আগে ছিল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।

এছাড়াও, বিগহেড কার্প ৯০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, আগে ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। নাইলোটিকা ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, আগে ছিল ১২০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা। কালবাউশ ১৩০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। আগে ছিল ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। মৃগেল ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আগে ছিল ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন টাকি, শোল, শিং ও দেশী মাছের দাম আগের মতোই রয়েছে বলে জানান খুচরা মাছ বিক্রেতারা।

মাছচাষি আসাদুল জানান, বাঁকিতে মাছের খাদ্য নিলে বস্তা প্রতি দুই-তিন শ’ টাকা বেশি নেয় ডিলাররা। আবার বিঘাতে ৫০ হাজার টাকার নিচে জমি লিজ পাওয়া মুসকিল। স্থানীয় বাজারে এতোই মাছের চাপ আর এই কম দাম যে মাছ বিক্রি করে মাছের খাবারের টাকাই উঠছে না। ঢাকায় মাছ চালান দিয়েও তেমন সুবিধা হচ্ছে না। এতে নতুন ও ক্ষুদ্র  পুকুর চাষিরা লোকসানে পড়েছেন।

কৃষক মুক্তার আলী জানান, করোনার কারণে মাছ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। তাই পুকুরে অতিরিক্ত মাছ থেকে গেছে এবং তাদের বাড়তি খাদ্য খাওয়াতে হয়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। এদিকে মাছের এমন দরপতন ঘটেছে। কবে মাছের বাজার ঠিক হবে তা বলতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে মাছ চাষ বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।

চাষি গোলাম রাব্বানী জানান, অতিরিক্ত পুকুর খনন একদিকে গেছে ফসলী জমি অন্যদিকে অতিরিক্ত মাছের চাপে ঘটেছে এমন দরপতন এটারই সুযোগ নিয়েছে পাইকাররা। আমার মিডিয়াম সাইজের সিলভার বিক্রি করেছি ৬৫ টাকা কেজি স্মরণকালে এমন কম দাম কখনোই দেখিনি। আমার একটাই দাবী অবিলম্বে নতুন পুকুর খনন বন্ধ হোক তাদের জন্য স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি আমরা।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাপ হোসেন জানান, অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে স্থানীয় বাজারে এমন দরপতন ঘটেছে। নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এমন সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

উপজেলা মৎস্য অফিসার ইমরুল কায়েস জানান, সার্বিক পরিস্থিতির কারণেই মাছের এমন দরপতন ঘটেছে চাষি পাইকের উভয়েই আস্থা সংকটে  ভুগছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মাছের বাজার ঠিক হবে। সবকিছু মিলিয়ে লোকসানে উৎপাদন থেকে সরে আশার  সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেকেই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও দুঃসময় ভাগ্যে লেখা থাকবে দুর্গাপুরের মৎস্যচাষিদের।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ