নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মাছ ও মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বিস্তর পরিসংখ্যান ও তথ্য তুলে ধরেন। এসময় তিনি মাছ ও মাংসে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেন।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী জানান, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাংলাদেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য খাত দেশের মোট জিডিপি’র ৩.৬১ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে ২৪.৪১ শতাংশ অবদান রাখছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-১৭ সালে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। উক্ত অর্থ বছরে উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪১ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি।

আরও উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর Preliminary Report on Household Income and Expenditure Survey (HIES) 2016 ২০১৬ অনুযায়ী জনপ্রতি প্রতিদিন মাছ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৬২.৫৮ গ্রাম, যা দৈনিক মাথাপিছু মাছ চাহিদার চেয়ে বেশি। ফলে মাথাপিছু চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এতে “মাছে ভাতে বাঙ্গালী” ঐতিহ্য আমরা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম  হয়েছি।

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪১ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে মোট মাছ উৎপাদন (২৭ লক্ষ ১ হাজার মেট্রিক টন) -এর চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে ৪র্থ ও মৎস্যচাষে ৫ম।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যেই রুইজাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, কৈ, পাবদা, গুলশা ও শিং-মাগুর মাছের উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া এবং কৈ মাছ এখন প্রাণিজ আমিষের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তিনি জানান, সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপ, যথা- বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্যচাষ নিবিড়করণ, পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থাপন, মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন ও সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি ও মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ, মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন, প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, প্রজননক্ষম মাছের কৌলিতাত্ত্বিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাংস উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রণীত লাইভস্টক রিসোর্স ইন বাংলাদেশ, ১৯৯৫ গবেষণা পুস্তিকা অনুসারে জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম মাংসের দরকার। মাংসের এ চাহিদা পূরণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট মাংস উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৭১ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন, যার বিপরীতে মোট মাংস উৎপাদন হয়েছে ৭১ লক্ষ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন।

সে হিসেবে দেশে দৈনিক মাথাপিছু মাংসের প্রাপ্যতা ১২১.৭৪ গ্রাম, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। ফলে জনপ্রতি চাহিদা অনুযায়ী মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।

মাংস উৎপাদনে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের পাশাপাশি বিগত বছরে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম ও বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পোল্ট্রি উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাংসের উৎপাদন উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের হিসাব মতে বর্তমানে দেশে প্রায় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ এক দিনের ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। ফলে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পোল্ট্রি খামার স্থাপিত হয়েছে এবং জনপ্রতি মাংসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে গৃহীত কার্যক্রমের ফলে মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রাণিজ আমিষের অন্যান্য উৎস হিসেবে দুধ ও ডিম উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ৯২ লক্ষ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন এবং ১৪৯৩.৩১ কোটি।

দুধের ক্ষেত্রে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে উৎপাদন ছিল ২৬ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন যা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৯২ লক্ষ ৮৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে এবং ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৬৫.৩২ কোটি যা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৪৯৩.৩১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান সরকারের পোল্ট্রি ও ডেইরী খাতে বহুমাত্রিক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বিগত বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। 

মাছ ও মাংস উৎপাদনে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগোপযোগী দিক-নির্দেশনায় মৎস্য অধিদপ্তর এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রসারণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।