মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজশাহীতে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে পেঁয়াজের চাষ। ৫ বছরের মাথায় জেলাজুড়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ বাড়লেও দামে হতাশ চাষিরা। বর্তমান দামে উৎপাদন খরচ না উঠায় মাথায় হাত তাদের।

চাষিরা জানান, রাজশাহীর চার জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ‘তাহিরপুরি’ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এ পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বাড়িতে সংরক্ষণ করতে সহজ হওয়ায় চাষিরা সহজেই চাষ করতে পারেন। এছাড়া গুণে ও মানে অন্যান্য পেঁয়াজের চাইতে ভালো হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। বাজারে এ পেঁয়াজের বেশ কদর থাকায় বাজারজাত করা যায় নিমিষেই। জেলার মোহনপুর, তানোর, চারঘাট, বাগমারাসহ সবকটি উপজেলার বেশিরভাগই চাষ হয় এ পেঁয়াজ।

কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২ লাখ ৯ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। সে বছর গড় ফলন ১৩ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর। ২০১৭-১৮ সালে আবাদ হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৫৩৩ মেট্রিক টন। গড় ফলন ১৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর যা আগের বছরের তুলনায় ৮৫০ হেক্টর কম জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। আর তাই উৎপাদন কম হয়।

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয় ১৫ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন। গড় ফলন ১৪ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর। এবার আগের বছরের তুলনায় ৫৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ বৃদ্ধি পায়। এবছর উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন।

পড়তে পারেন: দাম কমেছে আলু-পেঁয়াজ ডিম মুরগি মাংসের

এরপর ২০১৯-২০ সালে চাষাবাদ ও উৎপাদন আবারো বৃদ্ধি পায়। এবছরে পেঁয়াজের চাষ হয় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টনে যা আগের চেয়ে ৬০ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন।

২০২০-২১ সালের দিকে পেঁয়াজের আবাদ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এবছর এক হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়ে। জেলায় মোট ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। এসময় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টনে। ২০-২১ সালে গড় উৎপাদন আসে ১৭ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন। বিগত চার বছরের আগের তুলনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা ছিল রেকর্ড পরিমাণ।

পড়তে পারেন: পেঁয়াজের দাম বেশি কমে গেলে আমদানি বন্ধ : কৃষিমন্ত্রী

এদিকে ২০২১-২২ সালে পেঁয়াজের আবাদ আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৮ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এবছর পেঁয়াজের সাম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন।

মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই ১ দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। বীজ পেয়াঁজ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম পড়ে গেছে। সাড়ে ৩’শ ৪’শ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি লস। পাইকারিতে যে দাম খুচরা বাজারে একটু বেশি। খুচরায় ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচ উঠলেও হতো। এখন মনে চার থেকে ৫’শ টাকা নাই হয়ে গেছে।

বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা শামিম শাহ্ বলেন, গত বছর রবি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলাম। আশা করেছিলাম ভালো দাম পাবো। কিন্তু তা আর হলো না। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা হলে ভালো হবে। তাছাড়া পেঁয়াজ চাষে লাভ নাই।

পড়তে পারেন: হিলিতে পেঁয়াজের কেজি ২ টাকা

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা। তবে, বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা চিন্তিত।

পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, দেশে কিছুদিন আগেই পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে আকাশচুম্বি দাম বেড়েছিল। যার কারণে বিগত দিনের তুলনায় পেঁয়াজের চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, আমাদের সরকার পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে গত দুবছর ধরে প্রণোদনা দিচ্ছে। এছাড়াও কৃষকদের বারি-৫ প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ করছেন যা মূলত গ্রীষ্মকালেও আবাদ হয়। মূলত এসব কারণে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন তুলনামূলক অনেকগুণ বেড়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ