নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪ স্থানে ভাঙ্গনে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জোতবাজার-আত্রাই সড়কের মাত্র ছয় কিলোমিটারের মধ্যে ৪ জায়গায় ভেঙ্গে যায়। দুর্গত এলাকার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন বিভিন্ন সড়ক ও উঁচু স্থানে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ১৪ জুলাই ২০২০ নদীর তীর সংলগ্ন মান্দা উপজেলার ত্রিমোহনী- ফকিন্নি নদীর পূর্বের মসলোটা পাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে নূরুল্যাবাদ, বিঞ্ষুপুর ও কষবা ইউনিয়নের ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে বুধবার ১৫ জুলাই ২০২০ বিকালে জোতবাজার-আত্রাই রাস্তার দাসপাড়া নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। এর কিছু পরেই ভেঙে যায় জোকাহাটে মোবাইল ফোন টাওয়ারের কাছে। রাত ৮টার দিকে ভেঙে যায় একই বাঁধের চকরামপুর এলাকা। শেষে রাত ৩টার দিকে পারনুরুল্লাবাদ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গিয়ে একই এলাকা প্লাবিত হতে শুরু কওে এতে অর্ধ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আত্রাই নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃষ্টি পাওয়ায় আটটি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরপর পানির প্রবল চাপ এসে পড়ে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। এতে আত্রাই ও ফকিরনী নদীর অন্তত ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো টিকিয়ে রাখতে বাঁধে পাহারা বসিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত কাজ শুরু করেন স্থানীয়রা।

বন্যার পানিতে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর, কয়লাবাড়ী, কর্ণভাগ, শহরবাড়ী, ক্ষুদ্র বান্দাইখাড়া, পারশিমলা, নহলা কালুপাড়া, আবিদ্যপাড়া, যশোপাড়া, পশ্চিম দুর্গাপুর, শিবপুর, চককামদেব, ভরট্ট শিবনগর ও দাসপাড়া, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ, মণ্ডলপাড়া, নিখিরাপাড়া, বাকশাবাড়ি, চকহরি নারায়ণ ও শাহানাপাড়া এবং কশব ইউনিয়নের বনকুড়া ও দক্ষিণ চকবালু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত হয়েছে আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া, কালিকাপুর ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়ন এবং বাগমারা উপজেলার বড়বিহানালী ইউনিয়নের মানুষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে দুর্গত এলাকার মানুষ। অনেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু নিয়ে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাসপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও চককামদেব বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অন্যদিকে তলিয়ে গেছে বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম কুমার মহন্ত এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান,গত ১৪ তারিখে সন্ধ্যার দিকে নদীর তীর সংলগ্ন মসলোটা পাড়ার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাই। সাথে সাথে ৪০-৫০ জন মানুষ লাগিয়ে বাঁধের দুর্বল পানি চোয়ানো অংশগুলো চাপা দেই। পানির চাপে পরে আরো জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে নওগাঁ জেলা প্রশাসক পাশে দাঁড়িয়েছেন। উপজেলা থেকে তাদের তালিকা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ত্রাণসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পাঠানো হবে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হালিম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বন্যা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের তালিকা করা হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য কয়লাবাড়ী সংলগ্ন বেড়ীবাঁধের রাস্তায় নলকূপ স্থাপন, অস্থায়ী টয়লেট এবং স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।