ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আজ পহেলা রবিউল আউয়াল। হিজরি বছরের তৃতীয় মাস। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (স.) এর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ‘উসওয়াতুন্নবি’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকেন।

ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, যখন আরবি মাসের নাম রাখা হয়, তখন আরবের ঋতু-প্রকৃতিতে বসন্তের রূপ-শ্যামলিমা বিরাজ করছিল। সে সূত্র ধরে এবং বসন্তের সূচনাপর্ব হওয়ায় হিজরি সালের তৃতীয় মাসের নাম ‘রবিউল আউয়াল’ রাখা হয়।

আবহমানকাল থেকে আরবে রবিউল আউয়াল বসন্তের সূচনাপর্ব হিসেবে স্বীকৃত। কালের পরিক্রমায় এই মাস ও বসন্তের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। মূলত চান্দ্র মাস ঘূর্ণায়মান হওয়ায় এমনটা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বছর রবিউল আউয়াল ইমানদারের দুয়ারে নবীপ্রেমের বার্তা নিয়ে আসে। ফলে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে মুমিন-হৃদয়ে নবীপ্রেমের ফল্গুধারা অধিক পরিমাণে বইতে থাকে।

আরও পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে চাষাবাদ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ধরাতে আগমনের মাস এটি। আবার এ মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম ও ইন্তেকালের কারণে মাসটি যেমন আনন্দের আবার তা সীমাহীন দুঃখ ও বেদনার। এ কারণেই কেউ কেউ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠলেও অনেকেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ও কর্মের সফলতাগুলো ‘উসওয়াতুন্নবি’ শিরোনামে অনুষ্ঠান আয়োজন করে তুলে ধরেন সবিস্তারে।

রাসুল প্রেমিক মুসলিম উম্মাহ এ মাসেই তাঁর প্রেমে হয়ে ওঠেন আত্মহারা পাগলপারা। গভীর প্রেম ও ভালোবাসায় জানান- হে রাসুল! এ পবিত্র মাসে আপনাকে জানাই হাজারও সালাম- ‘ইয়া নাবি, সালামু আলাইকা; ইয়া রাসুল, সালামু আলাইকা; ইয়া হাবিব সালামু আলাইকা; সালাওয়াতুল্লা আলাইকা’

আল্লাহ তাআলা মানুষকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষকে এ কথা জানিয়ে দেয়ার ঘোষণাও এসেছে কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ তাআলা এ মর্মে মানুষকে জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যে-

‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার আনুগত্য বা অনুসরণ কর; যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ভালোবাসবেন আর (এতে) তোমাদের পাপগুলো থেকে তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

রবিউল আউয়াল মাসে এ আয়াতের বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। কুরআনুল কারিমের এ আয়াতের উপর যথাযথ আমল হলে তবেই উসওয়াতুন্নবি, সীরাতুন্নবি কিংবা ঈদে মিলাদুন্নবি শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলো সার্থক হবে।

নাম সর্বস্ব অনুষ্ঠানের মধ্যেই যেন মুসলিম উম্মাহর আয়োজন শেষ হয়ে না যায়। এ বিষয়টি উপলব্দি করে কবি নজরুল ইসলাম বলেছিলেন- ‘রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই; রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই’

মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। না এমনটি হওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়ন করা। অন্যকে এ আদর্শ ধারণে অনুপ্রাণিত ও চেষ্ট করাও উম্মতে মুহাম্মাদির ঈমানি দায়িত্ব। আর তাতেই স্বার্থক হবে উসওয়াতুন্নবি বা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ বাস্তবায়নের সব অনুষ্ঠান আয়োজন।

আরও পড়ুন: ৩০ অক্টোবর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী

শুধু রবিউল আউয়াল মাসই নয়, বরং বছরজুড়ে বিশ্বনবির আদর্শ বাস্তবায়নে যে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন বা কার্যক্রম গ্রহণ করা দোষণীয় বরং তা হবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলিগের অন্যতম নিদর্শন। যেভাবে তিনি বলেছেন-

’আমার কাছ থেকে একটি আয়াত বা নিদর্শন পেলেও তা তোমরা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’ সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অনুষ্ঠান যদি করতেই হয় তবে, কুরআন-সুন্নাহর মোতাবেক জীবন পরিচালনার বিষয়গুলো তুলে ধরে। কুরআনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নিজে মানা এবং অন্যকে পালনের আহ্বানই হোক রবিউল আউয়ালের অঙ্গীকার।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠানে বিশ্বনবির সঠিক আদর্শ তুলে ধরার এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এ আদর্শ বাস্তবায়ন করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন (আমিন) ।

মোহাম্মদ (স.) এর আর্দশে উজ্জীবিত হওয়ার মাস ‘রবিউল আউয়াল শিরোনামে সংবাদের তথ্য দেশ রুপান্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি