মৌমাছি ২০’র অধিক ফলমূল

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মৌমাছি কী শুধুই আমাদের মধু দেয়? না অবশ্যই না বরং প্রতিদিন আমরা যে খাবার খাই, তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে মৌমাছির পরাগায়ন থেকে। এ থেকেই প্রমাণিত যে মৌমাছি কী ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের খাদ্যের ‍উৎপাদনে। মৌমাছি ২০’র অধিক ফলমূল, ফসলের উৎপাদন ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে আরও পরিস্কার হবে মৌমাছির ভূমিকার গুরুত্ব। কীটপতঙ্গের মাধ্যমে যেসব উদ্ভিদের পরপরাগায়ন হয় তাতে শুধু মৌমাছির অবদানই ৮০% (অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার উদ্ভিদ)। বর্তমানে মানুষ খাবার হিসেবে যে ফলমূল, শাকসবজির ওপর বেশি নির্ভরশীল সেগুলোর ৭০% উৎপন্ন হয় মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে।

পৃথিবীতে প্রতি বছরে যে পরিমাণ খাদ্য মৌমাছির পরাগায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় সেগুলোর আর্থিক মূল্য আনুমানিক ২২ হাজার কোটি ডলার। এ অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী ১৪০ কোটি মানুষের জীবিকা।

বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাবারের জোগান দিতে প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। মৌমাছির সহায়তা ছাড়া যা এক প্রকার অসম্ভব। তাই মৌমাছির জীবন হুমকির মুখে পড়লে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও হুমকির মুখে পড়বে।

আর একটি মৌচাকে যত মৌমাছি বাস করে তার চারপাশে ৪ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে যত ফুল ফোটে, একদিনে সেগুলোতে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ ও পরাগায়ন করতে সাহায্য করে এসব মৌমাছি। মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয় এমন ফল ও সবজির তালিকা অনেক লম্বা।

যেসব ফল সবজি উৎপাদনে মৌমাছির প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে সেগুলোর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, মরিচ, পেঁপে, বাদাম, তরমুজ, কমলা, আঙুর, কুমড়া, লেবু, গাজর, লিচু, আপেল, আম, শিম, টমেটো অন্যতম।

রাজশাহী, দিনাজপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর  প্রভৃতি জেলায় লিচু, আম, সরিষার মধু প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। গোপালগঞ্জ আবার কালোজিরা ও ধনিয়া মধুর জন্য বিখ্যাত।

মধুর জন্য নাম রয়েছে টাঙ্গাইলের লালমাটির মধুপুর এলাকার মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়ীয়া, ঘাটাইল, সখীপুর, ভালুকা ও জামালপুর সদর উপজেলায় আনারস, কাঁঠাল, কলা, সরিষা, তিল, তিসি, জলপাই, লিচু, আম, পেঁপে, কুল, আদা, হলুদ, মিষ্টিকুমরা, লাউ, শিম, আলু, কাসাভা, কপি, গাজর, মুলাসহ বিভিন্ন কৃষিজ ফসল বাণিজ্যিকভিত্তিতে উৎপাদন করা হয়।

ফলে এসব এলাকায় রয়েছে অনেক মৌচাষি। বীজ ও ভালো ফসল উৎপাদনে পরাগায়ন অত্যাবশ্যক, বীজ ফসলের মাঠে কীটপতঙ্গ দ্বারা পরাগায়ন অধিক কার্যকর।

প্রাচীনকাল থেকেই মৌমাছি মানুষের কাছে সামাজিক পতঙ্গ হিসেবে পরিচিত কারণ এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত যে মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে বনজ, ফলদ ও কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ২৫-৩০% বাড়িয়ে দেয়। উৎপাদিত বাড়তি ফসলের মূল্য মোট উৎপাদিত মধু ও মোমের মূল্যের ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।

মৌমাছিকে তাদের  প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাই মূলত মৌমাছি পালন।

একটি মৌচাকে গড়ে প্রায় ২০ হাজার মৌমাছি থাকে। একটি চাকে সাধারণত ৩  শ্রেণির মৌমাছি থাকে একটি রানী মৌমাছি যা প্রজননে অংশ নেয়; ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি, কর্মী মৌমাছি। রানী মৌমাছি সবচেয়ে বড় প্রকৃতির।

একটি চাকে একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। এর একমাত্র কাজ ডিম পাড়া। পুরুষ মৌমাছি মধ্যম আকৃতির ও এদের চোখ বড় কিন্তু  হুল নেই, একমাত্র কাজ রানীর সাথে মিলিত হওয়া। শ্রমিক মৌমাছি সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির। এদের চোখ ছোট, কিন্তু হুল আছে। রানী ও পুরুষ বাদে অবশিষ্ট সকল সদস্যই শ্রমিক মৌমাছি।

এরা নানা দলে ভাগ হয়ে চাকের যাবতীয় কাজ যথা- চাক নির্মাণ করা, ফুলের মিষ্টি রস ও পরাগরেণু সংগ্রহ করা, মধু তৈরি করা, চাকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, চাকে বাতাস দেয়া চাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

মৌমাছি ২০’র অধিক ফলমূল, ফসলের উৎপাদন ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে শিরোনামের লেখাটি কৃষিকথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। লিখেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল মুঈদ।

আরও পড়ুন: সফল কৃষককে সিআইপি’র মতো এআইপি কার্ড প্রদানের প্রস্তাব সংসদে অনুমোদন