ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় ফসলের চাষ হয়। এর মধ্যে খেসারি কলাই ডাল অন্যতম। সঠিক পদ্ধতিতে খেসারি ডালের চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই আসুন খেসারি ডালের সঠিক চাষ পদ্ধতি জেনে নিই:

জমি ও মাটি নির্বাচন:
দো-আঁশএবং এটেল দো-আঁশ মাটিতে খেসারী ভালো জন্মে। খেসারী প্রধানত বোনা আমন ধান কাটার আগে রিলে ফসল হিসেবে আবাদ করা হয়। সেজন্য জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। একক ফসল হিসেবে আবাদের ক্ষেত্রে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিতে হবে।

আরও পড়ুন: মসুর ডাল চাষের সঠিক পদ্ধতি

জাত পরিচিতি: 
বারি খেসারি-১ জাত: 
স্থানীয় জাতের তুলনায় ৪০% পর্যন্ত বেশি ফলন দেয়। এ জাতের গাছ গাঢ় সবুজ এবং প্রচুর শাখা-প্রশাখা হয়ে থাকে। বারি খেসারি-১ জাতের হাজার বীজের ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। ফসল পাকতে ১২৫-১৩০ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৪-১.৬ টন। এ জাত পাউডারি ও ডাউনী মিলডিউ রোগ প্রতিরোধী।

বারি খেসারি-২ জাত: গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সেমি। পাতা স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি চওড়া। ফুলের রং নীল। বীজ একটু বড়, হাজার বীজের ওজন ৫০-৫৫ গ্রাম। বীজের রং হালকা ধূসর। আমিষের পরিমাণ ২৪-২৬%। বীজ বপন থেকে ফসল পাকা পর্যন্ত ১২৫-১৩০ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-২ টন।

সার প্রয়োগ: খেসারির রিলে ফসলের ক্ষেত্রে সারের প্রয়োজন হয় না। একক ফসলের জন্য অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ হারে সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৪৫ কেজি
টিএসপি ৮০-৮৫ কেজি
এমওপি ৩০-৪০ কেজি

সমুদয়: সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। আগে খেসারির চাষ না করা জমিতে আবাদের জন্য প্রতি কেজি বীজের সাথে ১০০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

বীজ বপন: বিলে ফসলের ক্ষেত্রে আমন ধানের পরিপক্কতাকাল এবং জমির রসের পরিমাণের উপর খেসারির বীজ বপনের সময় নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কার্তিক মাস থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (মধ্য-অক্টোবর থেকে নভেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করতে হবে। একক ফসলের জন্য মধ্য-কার্তিক থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর) মাসে বীজ বপন করতে হবে।

বিলে ফসল হিসেবে চাষ করলে আমন ধান কাটার প্রায় এক মাস আগে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকা অবস্থায় বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হবে। একক ফসল হিসেবেও বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি রাখতে হবে। প্রতি একরে ১৬-১৮ কেজি বীজ লাগে, তবে রিলে ফসলের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হয়।

পরিচর্যা: বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে নিড়ানী দ্বারা আগাছা দমন করা যেতে পারে। অতিবৃষ্টি হলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। খেসারির ডাউনি মিলডিউ রোগ হলে প্রতিরোধী বারি খেসারি-১, বারি খেসারি -২ জাতের চাষ করতে হবে। এছাড়া রিডোমিল এম জেড (০.২%) ১২ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন: যে পদ্ধতিতে মাসকলাই চাষে অধিক লাভবান হবেন

ফসল সংগ্রহঃ– ফাল্গুন (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মাসে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

বীজ সংরক্ষণঃ– বীজ ভালভাবে রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতার পরিমাণ আনুমানিক ১০%এর নিচে রাখতে হবে। তারপর টিনের পাত্র ও পলিথিনের ব্যাগ বা চটের ব্যাগ অথবা আলকাতরার প্রলেফ দেওয়া মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

যে পদ্ধতিতে খেসারি ডাল চাষে শতভাগ সফলতা আসে শিরোনামে লেখাটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি