ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রংপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় টানা ১১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এই বৃষ্টিপাত শত বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে রংপুর আবহাওয়া অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে।

নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডের ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে ডুবে জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নগরীর অপেক্ষঅকৃত বেশি পানিতে ডুবে থাকা এলাকায় রংপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের রেসকিউ নৌকা নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। নগরের প্রধান সড়ক প্রায় ২ ফুট থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নগরীর প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ।

শুধু তাই নয় পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়িতে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়েছে। নগরী পয়নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে এই বৃষ্টিপাতে নগরবাসীকে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে নগরীর বাসিন্দারা মনে করেন।

আরও পড়ুন: ২৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস

একাধিক বিপণিবিতানের ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় অনেক ব্যবসায়ীর বিভিন্ন মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকের মালামাল রাখার গুদাম ঘরে পানিতে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। এর পরিমাণ প্রায় অর্ধকোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। অনেকের বাসা বাড়িতে ঘরের ভেতর পানিতে ভিজে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ও খাদ্য শস্য নষ্ট হয়ে গেছে।

নগরের সমাজকল্যাণ বিদ্যাবিথী স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নিয়েছে ১৫টি পরিবার। এদের মধ্যে সানজিদা বেগম জানান, মুলাটোল ও সেনপাড়া মহল্লার প্রায় সিংহভাগ এলাকা ডুবে গেছে। তার বাসা সেনপাড়ায় ৫ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। তার মতো মুলাটোল, সেনপাড়া ও নিউ সেনপড়া ১৫টি পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। বাসা বাড়ি ও ঘরের আসবাবপত্র পানিতে ডুবে আছে। ঘরে রান্না করে খাবার পরিস্থিতি নাই।

মুলাটোলে থানা মোড়ে আশ্রয় নিয়েছেন গৃহিণী আছিয়া বেগম। তিনি জানান, তার ঘরের ভেতর বিছানাপত্র পানিতে ডুবে আছে। ঘরের আসবাবপত্রসহ ব্যবসার জন্য মজুদ মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নুরজাহান বেগম, গুপ্তপাড়া মহল্লার বাসিন্দা তিনি জানান, তার ঘরের ভেতর পানিতে সব ডুবে আছে। তার ঘরের ব্যবসায়িক পণ্যগুলো পানিতে ভিজে গেছে। এগুলো তিনি কোথায় নিরাপদে রাখবেন সে আশ্রয়টুকুও নেই তার।

এই পরিস্থিতির কারণে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিবন্দি মানুষকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। দিনভর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি লোকজনের কোনো খোঁজখবর না নেয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

পানিবন্দি লোকজনের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ বাসা বাড়ি শৌচাগারগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লোকজন।

আরও পড়ুন:দেশের যেসব স্থানে হতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি

রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা রংপুরের শত বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

রংপুর ডিসি আসিব আহসান জানিয়েছেন, তিনি সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রিত প্রায় তিন শতাধিক পরিবারকে শুকনো খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনকে ২০ টন চাল দেয়া হয়েছে, সেগুলো তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করতে বলা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে পীরগাছা, কাউনিয়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার একর ফসল পানির নিচে ডুবে গেছে। নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোর বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে।

রংপুরে শতবছরের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি শিরোনামে সংবাদের তথ্য যুগান্তর থেকে সংগ্রক করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি