নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীতে এক বছরে ২৩৭টি ভেড়া জবাই করে ১৬৭৯ কেজি মাংস বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. জালাল উদ্দিন সরদার।

রাবি’র ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের তত্বাবধানে ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত “ভেলিডেশন অব গুড প্রাকটিসেস অব অন-ফার্ম ল্যাম্ব প্রোডাকশন সিস্টেমস” প্রকল্পের আওতায় এসব ভেড়া পালন করা হয়।

গত মঙ্গলবার ৫ জানুয়ারি ২০২১) দিনব্যাপি ভেড়া পালন প্রকল্পের সাফল্যের উপর সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে প্রকল্পের মূখ্য গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের প্রফেসর ড. জালাল উদ্দিন সরদার সংক্ষিপ্তভাবে প্রকল্পের কাঠামো, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য অর্জিত এসব সফলতা বর্ণনা করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস।

প্রফেসর ড. জালাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের কার্যক্রমের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভেড়া পালন ও ভেড়ার মাংসের চাহিদার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সফলতা অর্জিত হয়েছে। মাত্র ১ বছরের মধ্যে প্রকল্পের মডেল কসাইখানায় ২৩৭টি ভেড়া জবাই করে ১৬৭৯ কেজি মাংস বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রিত মাংসের সমুদয় অর্থ খামারীদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেড়ার মাংস স্বাদে, গুনে ও মানে উৎকৃষ্ট এটা এখন কোন গল্প নয়।

আরোও পড়ুন:  ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের উপায়

তিনি আরোও বলেন, ভেড়ার মাংসের মধ্যে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান একদিকে যেমন বেশি অপর দিকে ক্ষতিকর চর্বি, কোলস্টেরলের পরিমান অনেক কম। ভেড়ার মাংস স্বাদেও উৎকৃষ্ট হওয়ায় একবার যিনি মাংস ক্রয় করেন তিনি বারবার ক্রয় করতে চান। তিনি বলেন এ অল্প সময়ের মধ্যেই ২০ জনের অধিক ক্রেতা ৫ বারের অধিকবার মাংস ক্রয় করেছেন।

ভেড়া পালনকারীদের জীবন যাত্রার মানের পরিবর্তনে আশান্বিত ফলাফল ফেলেছে। অনেক খামারী বিগত দেড় বছর সময়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন ভেড়া বিক্রি থেকে। তিনি ১২ জন খামারীর সফলতার বর্ণনা করেন যারা সকলেই ৫০ হাজার টাকার অধিক ভেড়া বিক্রি করেছেন। ভেড়া বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ছেলে মেয়ের লেখাপড়া, চিকিৎসা, গরু ক্রয়, জমি ক্রয়, জমি লীজ নেয়া ঘর ও ল্যাট্রিন ঠিক করা, পানি খাওয়ার জন্য নলকুপ বসানো, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কাজ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরোও পড়ুন: গরু মোটাতাজাকরণ ও ছাগল, ভেড়া, গাভী পালনে মিলবে কৃষি ঋণ

ভেড়া খামারীদের দেখে প্রায় ৩৭ জন নিজ উদ্যোগে খামার করেছেন। প্রকল্প থেকে নতুন ৫৩ জন হতদরিদ্র ব্যক্তিকে ২টি করে ১০৬টি ভেড়া দেয়া হয়েছে। একটি এনজিও এর ৪ জন সদস্যকে ১২টি এবং একজনকে বাণিজ্যিকভাবে খামার করার জন্য ২৩টি ভেড়া সরবরাহ করা হয়েছে। বর্তমানে খামারীদের কাছে যে ভেড়া আছে তার প্রতিজনের মূল্যমান লক্ষাধিক টাকা । দুধ উৎপাদন কম হওয়ায় ভেড়ার বাচ্চার মৃত্যুর হার একটু বেশি এবং এ ব্যাপারে নিবিড় গবেষণা পরিচালনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রকল্পের সফলতার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, এমন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করতে পেরে কেজিএফ গর্ব বোধ করছে। তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান ও ভবিষ্যতেও এমন ধরনের গবেষণায় সাহায্য অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাঃ ইসমাইল হক বলেন, প্রকল্পের সফলতায় তিনি অভিভূত। তিনি প্রকল্পের সমাপ্তি পরবর্তী সময়ে খামারীদের সার্বিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।

এসময় একজন নতুন উদ্যোক্তাকে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভেড়া খামার করতে সহায়তা করতে প্রকল্প নির্ধারিত মূল্যে ১০টি ভেড়া সরবরাহ করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি চীফ ভেটেরিনারি অফিসার ও প্রকল্পের কো-আই ড. মোঃ হেমাতেুল ইসলাম আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব প্রদান করেন প্রকল্পের কো-আই প্রফেসর ড. মোঃ আখতারুল ইসলাম।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, বিশিষ্ট অ্যনেসথেসিওলজিস্ট, রোটারিয়ান হাসিবুল হাসান নান্নু, শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শাহ, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন, এ আই কর্মীসহ পিএইচডি ফেলো মো: ইসমাইল হক, এম এস ফেলো মো: নেয়ামতুল্লাহ সহ প্রকল্প ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ