মোফাজ্জল বিদুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরের বন্যায় রাজশাহীতে রোপা আমন আবাদে ক্ষতি ৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দফায় দফায় বন্যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার একাধিক উপজেলায় ৪৭৩ দশমিক ৫ হেক্টর জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে এসব ক্ষতি হয়েছে। পানির নিচে ধান গাছ ডুবে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। দফায় দফায় বন্যায় বিভিন্ন সবজি জাতীয় ফসলের পাশাপাশি ধানের ক্ষতি হয়।

অন্যের চার বিঘা জমি লিজ নিয়ে রোপা আমনের আবাদ করেছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা গ্রামের ধান চাষি মোতাহার আলী। নিজস্ব দুই বিঘা জমিসহ মোট ছয় বিঘা জমিতে এবার রোপা আমনের আবাদ করেছেন। ছয় বিঘা জমিতে রোপা আমনের চাষ করতে গিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন তিনি। কিন্তু অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে তার জমির ধান।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে সাড়ে ৮০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মরিচ

রাজশাহীতে বন্যায় পান বরজের ক্ষতি ১১ কোটি ছাড়িয়ে

মোতাহার আলী জানান, বর্তমানে খুব আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছি। বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতির পরে এলাকার চেয়ারম্যান ভিজিডিএফ এর চালের কার্ড করে দিয়েছেন। কিন্তু কৃষি সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত কোন প্রণোদনা পায়নি। আগাম শীতের সবজি এবং বিভিন্ন ফসল চাষ করতে তাকে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হবে। একই ভাষ্য এলাকার অন্য কৃষকদেরও।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবার রাজশাহীতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৭৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। তবে চলতি মৌসুমে ৭৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১ হাজার ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।

অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি বছর বন্যায় জেলার ৫ হাজার ৬৩৬ জন কৃষক রোপা আমনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। জেলার বাগামারা, মোহনপুর এবং তানোর উপজেলার কৃষকেরা এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোছাঃ উম্মে ছালমা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, কৃষকের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে আমরা ইতিমধ্যে প্রণোদনার কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ৪ হাজার কৃষকে বিনামূল্যে মাসকালাই বীজ ও তিন হাজার ২০০ কৃষককে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলার মধ্যে বন্যায় রোপা আমনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন বাগমারার কৃষকরা। এ পর্যন্ত তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের একটি তালিকা করে অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা অনুমোদন পেলে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজশাহীতে বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এ সময়ে দরকার সরকারি সহযোগিতা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে প্রণোদনার উপকরণ।