মোফাজ্জল বিদুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অতিবর্ষণ ও দফায় দফায় বন্যায় মাথায় হাত পড়েছে পান চাষিদের। লাভের আশায় পান চাষ করে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন রাজশাহীর চাষিরা। চলতি বন্যায় রাজশাহীতে পান বরজের ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।

জেলার বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলার ১৭ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহীর ৬৯ হাজার ২২৮ জন কৃষক পান উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছর জেলায় চার হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় ৬৮ হাজার ৯৭৬ টন। এরমধ্যে চলতি বছরের প্রথম দফা বন্যায় ৬৭৮ মেট্রিক টন পানের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৮ কোটি ৮২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দফায় বন্যায় জেলার বাগামারায় ২ কোটি ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার পান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় পানবরজে মোট ক্ষতি দাঁড়ায় ১১ কোটি ৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।

আরোও পড়ুন: পানের পাতা পচা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

বরজে ঝরছে পান

দফায় দফায় বন্যার পরও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন রাজশাহীর পান চাষিরা। কিন্তু চাষিদের সেই স্বপ্ন ডুবছে অতি বৃষ্টি ও অকাল বন্যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রণোদনায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। কিছুতেই সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

রাজশাহীর মোহনপুর সদর এলাকার পান চাষি উমর আলী। দীর্ঘদিন ধরেই পান চাষ করেন। এনজিও থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে ৩০ হাজার টাকা ঋণ চাষ করছিলেন পান। কিন্তু অকাল বন্যায় তলিয়ে গেছে তার বরজ। আগেও এক দফা ডুবেছিল বরজ। তাতে কিছুটা বাঁচলেও এবার আর রক্ষা পাননি এই চাষি।

পানচাষি উমর আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ‘পান এলাকার চাষিদের কাছে সোনা। ১০ কাঠা বরজ থেকে খরচ বাদে আয় হয় ৭০ হাজার টাকা।এ নিয়ে সংসার চলে সন্তানদের পড়ালেখাও চলছিলো। ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করে আসছিলেন বরজ থেকেই। কিন্তু চলতি বছর এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া অসম্ভব। নতুন করে বরজ শুরু করতে ফের এনজিও থেকে ঋণ নিতে হবে।’

একই উপজেলার লনগর জাহানাবাদ এলাকার পান চাষি ফজলু রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পানের বরজ করেছি। এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং দফায় দফায় বন্যায় পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে অতিবৃষ্টির কারণে পানের বরজের অধিকাংশ পঁচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর এলাকার শত শত পান চাষির মরণদশা।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, রাজশাহীতে চার দফা বন্যা হয়েছে।এ বছর দফায় দফায় বন্যায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের প্রণোদনাতে আর্থিক তেমন কিছু দেওয়া হয় না।

এই কর্মকর্তা আরোও বলেন, শুধু সামনে ফসল চাষাবাদের জন্য গম,ভূট্টা, সরিষা বা মসকলাই করার জন্য এক বিঘা জমিতে সার এবং বীজ দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরবর্তী ফসলের জন্য উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই উপ-পরিচালক।

উল্লেখ্য, এক হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় ১৫ টন। রাজশাহীতে বন্যায় পান বরজের ক্ষতি ১১ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের পান চাষিরা। এসব পান নষ্ট হওয়ায় পানের দাম ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ